ফিলিস্তিনের মুকুটহীন সম্রাট, নন্দিত রাজনীতিক ও গাজা শাসনকারী
হামাসের প্রধান খালেদ মেশালকে হত্যায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের
শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের কাহিনী ফাঁস হয়ে গেছে।
আজীবন দেশান্তরিত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে অভূতপূূর্ব পৈশাচিকতায় হত্যা করতে চেয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল। তবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি। ইসলামপন্থী এই রাজনীতিককেই সম্ভবত ইসরাইল নামক হায়েনা রাষ্ট্রটি সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। মেশালকে হত্যা পরিকল্পনার কাহিনী নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন পরিচালক ইয়াসের আবু হিলালাহ। ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি বর্বর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মেশালকে হত্যার চেষ্টা করে। তখন থেকে তিনি জর্ডানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। তাকে হত্যার জন্য আম্মানে উপস্থিত হয় ছয় সদস্যের মোসাদ টিম। ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে আমস্টারডাম, টরোন্টো ও প্যারিস থেকে একযোগে জর্ডানের রানী আলিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আম্মান প্রবেশ করেন তারা। এ প্রসঙ্গে ‘কিল হিম সাইলেন্টলি’ তথ্যচিত্রের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে মেশাল বলেন, ‘ওই বছর গ্রীষ্মেই ইসরাইলি হুমকি শুরু হয়। ফিলিস্তিনি অভিযান বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ইসরাইল। কাজেই তারা নির্বাসিত হামাস নেতাদের হুমকি দিতে লাগল। এসব হামলার নেপথ্যেই লুকিয়ে ছিল ইসরাইলি পরিকল্পনা। তবে ইসরাইল যেহেতু কোনোদিনই জর্ডানে কোনো অভিযান চালায়নি, তাই আমরা অনেকটা নির্ভার ছিলাম।’ জেরুজালেম ও তেলআবিবে হামাসের সিরিজ আত্মঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মোসাদ মেশালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এসব হামলায় অন্তত ২০ ইসরাইলি নিহত ও শ’ শ’ লোক আহত হয়। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ইসরাইল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু মোসাদসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। তিনি হামাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল চরম প্রতিশোধ নেয়া। সে সময় জর্ডান ও ইসরাইলের সম্পর্কও ভালো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় গোপন অভিযান চালিয়ে মেশালকে হত্যার সবুজ সঙ্কেত দেন নেতানিয়াহু। সিদ্ধান্ত হয়, মেশালকে এমন বিষ প্রয়োগ করা হবে, যাতে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক অচল হয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। পরিকল্পনা করা হয়, মেশালের কানে বিষ ছিটিয়ে দেয়া হবে। এতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হবে। ফলে কোনো অস্ত্র ছাড়াই মেশালকে হত্যা করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেশালের কানে বিষ প্রয়োগ করে দু’জন মোসাদ এজেন্ট। তবে তাদের ধাওয়া করেন মেশালের একজন দেহরক্ষী মুহাম্মদ আবু সাইফ। পরে প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মির একজন কর্মকর্তার সহায়তায় এজেন্টদের ধরে ফেলা হয়। এটি ছিল ইতিহাসের একটি চরম ব্যর্থ বিশেষ অভিযান। এরপরই বিস্ময়কর উত্থান ঘটে হামাসের। দুই পর্বের এই তথ্যচিত্রে খালেদ মেশালের পাশাপাশি তত্কালীন মোসাদের প্রধান ড্যানি ইয়াটমের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে। ড্যানিই এই পরিকল্পনার প্রধান হোতা ছিলেন। কিন্তু মোসাদ এজেন্টরা ধরা পড়ার পর মেশালকে বাঁচাতে প্রতিষেধক নিয়ে আম্মানে উপস্থিত হন ড্যানি। তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্বে দেখানো হবে মেশালকে হত্যার পর পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নাটকীয় ঘটনাবলী। জর্ডানের রাজার অফিসের কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আলী শুকরি সে সময় পালন করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বলেন, ‘জর্ডানের রাজা হুসেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ফোন করে ঘটনা অবহিত করেন। এ ঘটনা শুনে বিস্মিত হন ক্লিনটন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, জর্ডানে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আলাপচারিতা শেষে ক্লিনটন নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ওই লোকটা অসম্ভব মানুষ।’ ক্লিনটনকে রাজা বলেন, ‘মেশালকে বাঁচাতে প্রতিষেধক ইসরাইলকেই দিতে হবে। মেশাল মারা গেলে ইসরাইল-জর্ডান শান্তিচুক্তি বাতিল করা হবে।’ এ সময় ইসরাইল থেকে প্রতিষেধক নিয়ে আম্মানে হাজির হন মোসাদ প্রধান ড্যানি। রাজা তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। দু’দেশের মধ্যে এ সময় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। রাজা আম্মানের ইসরাইলি দূতাবাস ঘেরাও করে রাখার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। মোসাদের ডেথ স্কয়াডের সদস্যরা দূতাবাসে পালিয়েছিল। এ সময় মেশালকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন হুসেন মেডিকেল সিটি হাসপাতালের চিকিত্করা। মেশাল সে সময় কোমায় চলে যান। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, মেশালকে মরফিন জাতীয় মাদক প্রয়োগ করে মোসাদ, যার ফলে দেহ অসাড় হয়ে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। ২৭ সেপ্টেম্বর মেশাল মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থা কোমা থেকে ফিরে আসেন। এতদিন এই শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী অনেকেরই ছিল অজানা। বিশেষ করে গণমাধ্যম অতিসম্প্রতি এ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
আল জাজিরা অবলম্বনে ইলিয়াস হোসেন
আজীবন দেশান্তরিত এই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে অভূতপূূর্ব পৈশাচিকতায় হত্যা করতে চেয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরাইল। তবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি। ইসলামপন্থী এই রাজনীতিককেই সম্ভবত ইসরাইল নামক হায়েনা রাষ্ট্রটি সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। মেশালকে হত্যা পরিকল্পনার কাহিনী নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন পরিচালক ইয়াসের আবু হিলালাহ। ১৯৯৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইসরাইলি বর্বর গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মেশালকে হত্যার চেষ্টা করে। তখন থেকে তিনি জর্ডানে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। তাকে হত্যার জন্য আম্মানে উপস্থিত হয় ছয় সদস্যের মোসাদ টিম। ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে আমস্টারডাম, টরোন্টো ও প্যারিস থেকে একযোগে জর্ডানের রানী আলিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে আম্মান প্রবেশ করেন তারা। এ প্রসঙ্গে ‘কিল হিম সাইলেন্টলি’ তথ্যচিত্রের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে মেশাল বলেন, ‘ওই বছর গ্রীষ্মেই ইসরাইলি হুমকি শুরু হয়। ফিলিস্তিনি অভিযান বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ইসরাইল। কাজেই তারা নির্বাসিত হামাস নেতাদের হুমকি দিতে লাগল। এসব হামলার নেপথ্যেই লুকিয়ে ছিল ইসরাইলি পরিকল্পনা। তবে ইসরাইল যেহেতু কোনোদিনই জর্ডানে কোনো অভিযান চালায়নি, তাই আমরা অনেকটা নির্ভার ছিলাম।’ জেরুজালেম ও তেলআবিবে হামাসের সিরিজ আত্মঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মোসাদ মেশালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এসব হামলায় অন্তত ২০ ইসরাইলি নিহত ও শ’ শ’ লোক আহত হয়। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ইসরাইল। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু মোসাদসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। তিনি হামাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল চরম প্রতিশোধ নেয়া। সে সময় জর্ডান ও ইসরাইলের সম্পর্কও ভালো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় গোপন অভিযান চালিয়ে মেশালকে হত্যার সবুজ সঙ্কেত দেন নেতানিয়াহু। সিদ্ধান্ত হয়, মেশালকে এমন বিষ প্রয়োগ করা হবে, যাতে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক অচল হয়ে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। পরিকল্পনা করা হয়, মেশালের কানে বিষ ছিটিয়ে দেয়া হবে। এতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হবে। ফলে কোনো অস্ত্র ছাড়াই মেশালকে হত্যা করা সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেশালের কানে বিষ প্রয়োগ করে দু’জন মোসাদ এজেন্ট। তবে তাদের ধাওয়া করেন মেশালের একজন দেহরক্ষী মুহাম্মদ আবু সাইফ। পরে প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মির একজন কর্মকর্তার সহায়তায় এজেন্টদের ধরে ফেলা হয়। এটি ছিল ইতিহাসের একটি চরম ব্যর্থ বিশেষ অভিযান। এরপরই বিস্ময়কর উত্থান ঘটে হামাসের। দুই পর্বের এই তথ্যচিত্রে খালেদ মেশালের পাশাপাশি তত্কালীন মোসাদের প্রধান ড্যানি ইয়াটমের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে। ড্যানিই এই পরিকল্পনার প্রধান হোতা ছিলেন। কিন্তু মোসাদ এজেন্টরা ধরা পড়ার পর মেশালকে বাঁচাতে প্রতিষেধক নিয়ে আম্মানে উপস্থিত হন ড্যানি। তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় পর্বে দেখানো হবে মেশালকে হত্যার পর পর্দার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান ও ইসরাইলের মধ্যকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নাটকীয় ঘটনাবলী। জর্ডানের রাজার অফিসের কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আলী শুকরি সে সময় পালন করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি বলেন, ‘জর্ডানের রাজা হুসেন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ফোন করে ঘটনা অবহিত করেন। এ ঘটনা শুনে বিস্মিত হন ক্লিনটন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, জর্ডানে এ ঘটনা ঘটতে পারে। আলাপচারিতা শেষে ক্লিনটন নেতানিয়াহুর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ওই লোকটা অসম্ভব মানুষ।’ ক্লিনটনকে রাজা বলেন, ‘মেশালকে বাঁচাতে প্রতিষেধক ইসরাইলকেই দিতে হবে। মেশাল মারা গেলে ইসরাইল-জর্ডান শান্তিচুক্তি বাতিল করা হবে।’ এ সময় ইসরাইল থেকে প্রতিষেধক নিয়ে আম্মানে হাজির হন মোসাদ প্রধান ড্যানি। রাজা তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। দু’দেশের মধ্যে এ সময় তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। রাজা আম্মানের ইসরাইলি দূতাবাস ঘেরাও করে রাখার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। মোসাদের ডেথ স্কয়াডের সদস্যরা দূতাবাসে পালিয়েছিল। এ সময় মেশালকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন হুসেন মেডিকেল সিটি হাসপাতালের চিকিত্করা। মেশাল সে সময় কোমায় চলে যান। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, মেশালকে মরফিন জাতীয় মাদক প্রয়োগ করে মোসাদ, যার ফলে দেহ অসাড় হয়ে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। ২৭ সেপ্টেম্বর মেশাল মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থা কোমা থেকে ফিরে আসেন। এতদিন এই শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনী অনেকেরই ছিল অজানা। বিশেষ করে গণমাধ্যম অতিসম্প্রতি এ সম্পর্কে জানতে পেরেছে।
আল জাজিরা অবলম্বনে ইলিয়াস হোসেন