বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১২

২০ ট্রলার বোঝাই রোহিঙ্গা মুসলমান ৫ দিন যাবত সাগরে ভাসছে


খবর:শুধু মংডুতে ৪ শতাধিক মুসলিম নিহত

নাফ নদী থেকে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের লাশ -ইন্টারনেট
0 সারাদিন প্রবল বর্ষণে উদ্বাস্তুরা কাকভেজা ভিজছে রোহিঙ্গারা0 0রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সুচি নিশ্চুপ, নোবেল আনতে ইউরোপ গেলেন00 টেকনাফে রোহিঙ্গাদের খোঁজে বিজিবির তল্লাশি00 গ্রামের পর গ্রামে আগুন এখনও জ্বলছে
সংগ্রাম রিপোর্ট : মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রামে আগুন জ্বলছে। গত ক'দিনে মংডুতে ৪ শতাধিক মুসলমান খুন হয়েছে। ২০ ট্রলার বোঝাই দুই সহস্রাধিক মুসলমান ৫ দিন যাবত সাগরে ভাসছে। সারাদিন প্রবল বর্ষণে কাকভেজা হয়ে ভিজে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এদের মানবিক বিপর্যয়ে দুই দেশের কেউ এগিয়ে আসছে না। এদিকে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের হামলায় বিপর্যস্ত মুসলমানরা সে দেশের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত অং সান সুচির কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেও সুচি এ পর্যন্ত কোন কথা বলেননি। তদুপরি দেশের এই সহিংস অবস্থায়ও তিনি নোবেল পুরস্কার আনতে ইউরোপ গেছেন।
কামাল হোসেন আজাদ কক্সবাজার থেকে জানান, মিয়ানমারের আরাকানে আগুনের লেলিহানে জ্বলছে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম। ক'দিনের হামলায় মংডুতেই খুন হলো ৪ শতাধিক মুসলমান। মিয়ানমারের নাসাকার লুণ্ঠনসহ সামরিক সেনাদের হামলা-গুম, নির্যাতনের শিকার ২ সহস্রাধিক মুসলমান ২০টি ট্রলারযোগে উভয় দেশের নৌ সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্টে ৫ দিন যাবত ভাসমান অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উভয় দেশের কেউই এদের মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসছে না। চলতি মাসের শুরুতেই মিয়ানমারের এক মসজিদে তাবলিগ জামায়াতের ১০ জনসহ ১২ মুসলমানকে মগ সন্ত্রাসীরা হত্যা করার পর থেকে ওই দেশের মুসলিম প্রধান প্রায় নাসাকা-লুণ্ঠন ও সামরিক বাহিনীর হামলা তীব্রাকারে বৃদ্ধি পায়। এ থেকে আজ পর্যন্ত হত্যা-গুম, নির্যাতন-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ দিন দিন লোমহর্ষক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হচ্ছে আরাকানের আলেম-মাদরাসার ছাত্র, পাড়া-মহল্লার সর্দার। সামরিক জান্তার সহায়তায় নাসাকার তীব্র নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না নারী ও শিশুরা। আরাকানে হাজার হাজার বাড়িঘর আগুনে জ্বলছে। বার্মার রাচিদং এলাকায় মগসন্ত্রাসীর সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে ১৩ জুন সকলে প্রাণ হারায় ১০ মুসলমান এবং নিখোঁজ হয়ে পড়ে ৫শ নারী-শিশু-পুরুষ। নিহতদের মাঝে ইসহাক (২০), সলিম উল্লাহ (৩০), ছালামত উল্লাহ (৩৫), আবুল (৭০) ও নাসিমউল্লাহ (১৭) এর নাম পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, রচিং-এর সামরিক জান্তার কার্যালয় ৮ গ্রামের মগ ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সরদার ও মাতববরকে শান্তি আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে মগনেতাদের ছেড়ে দিয়ে আটকিয়ে রাখে মুসলিম নেতাদের। ধারণা করা হচ্ছে এদের খুন ও গুম করা হয়েছে। এদের কয়েকশ' আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে আহাজারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই এলাকার জেলখানা থেকে কয়েদী দেখে স্ব স্ব বাড়ি ফেরার পথে মহিলারা ইসংসন নাসাকা প্রধানের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়।
এদিকে নির্যাতনের শিকার কয়েক হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু বিগত ৫ দিন যাবত সাগরে ২০টি বোটে করে ভাসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে ওই ক্ষুধার্ত মানুষগুলো মুষলধারে বৃষ্টিতে কাকভেজা ভিজেছে। এখানে অনেকেই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বলে জানান শাহপরীর দ্বীপের প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে মুসলমান নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান কক্সবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ঐক্যজোট নেতৃবৃন্দ।
বার্তা ২৪ ডটনেট : মিয়ানমারে সংখালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধে রোহিঙ্গারা যখন দেশটির গণতন্ত্র পন্থি নেত্রী বলে পরিচিত অং সান সুচি'র ‘সাহায্য' চাইছে, তখন সুচি গেলেন ইউরোপে নোবেল পুরস্কার আনতে। ১৯৭১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও বাইরে গেলে সামরিক সরকার আর ফিরতে দেবে না- এ ভয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে যাননি সুচি। মিয়ানমারে সীমান্তবর্তী নাফ নদীর উপকূলের ছোট্ট শহর টেকনাফ থেকে বৃহস্পতিবার এএফপি'র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ব্যাপারে কথা বলতে এবং সাহায্যের আবেদন জানতে সুচিকে আহবান জানায়।
এ বিষয়ে টেকনাফের নয়াপড়া শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মিয়ানমার সরকার এবং বিশেষ করে সুচির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সুচি এখনো আমাদের জন্য কোন কিছু করেনি এবং কিছু বলেননি। অথচ ১৯৯০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা এমন কি আমার বাবা মা তার পক্ষে নির্বাচনী অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তবু অন্য সব বার্মিজদের মতো তিনিও রোহিঙ্গাদের অধিকার সম্পর্কে নিশ্চুপ রয়েছেন।
ইসলাম আরো বলেন, তিনি মিয়ানমারের শরণার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে কারেনদের ব্যাপারেই বলেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে একটিও আশার বাণী শোনান না। আমরা শুনেছি বর্তমানে মিয়ানমার সরকার ও সুচি দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে সহিংসতার সুযোগ রাখাইন বৌদ্ধ এবং নিরাপত্তা বাহিনী মুংডু শহরের ময়দাপাড়া গ্রামের সকল মসজিদ দখল করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া সেখানে বহু রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলেও ইসলাম শুনেছেন বলে জানান। এই সব কর্মকান্ড নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাখাইনরা আরাকান দখলের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে করছে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে বুধবার ১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম সুচি ইউরোপ গেছেন তার নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে। যাবার আগে ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আমি মানুষের কল্যাণে আমার সাধ্যমত কাজ করতে চাই।
টেকনাফ থেকে বিডি নিউজ জানায়, টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের ২৫ নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গরা টেকনাফের কোথাও অবস্থান নিয়েছে কি-না তা অনুসন্ধানে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে। বিজিবি ৪২ ব্যাটালিনের অপারেশন অফিসার ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান বিডিনিউজকে জানান, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে শাহ পরীর দ্বীপ জেটি ঘাট দিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে ‘পুশব্যাক' করে। ক্যাপ্টেন কামরুল হাসান, রোহিঙ্গারা যাতে টেকনাফের কোথাও ‘আত্মীয়' পরিচয়ে অবস্থান করতে না পারে সে জন্য গত বুধবার রাতে মিস্ত্রীপাড়া ও জেলেপাড়ার বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালানো হয়। তবে এ সময় কাউকে আটক করা হয়নি। গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ, বদর মোকাম ও সেন্টমার্টিন এলাকা থেকে ১১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বিজিবি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিঅর এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তবে দুই দশক ধরে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশের পর তাদের নিয়ে সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশ এই আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে ঠেকাতে কাজ করছে বিজিবিসহ আইনশৃক্মখলা বাহিনী। বিজিবি স্থল সীমান্তে পাহারা জোরদারের পাশাপাশি নাফ নদীতেও স্পিডবোট নিয়ে টহল দিচ্ছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হলেও তাতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলেও তথ্য রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন