মুহাম্মদ এনামুল হক :
গত ১৪ই মে, সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত খাদেমুল হারামাইন আশ শারীফাইন বাদশাহ আব্দুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে গালফ দেশগুলোর এক সম্মেলনে মুসলিম বিশ্ব তথা ইসলামী উম্মাহর সুবিধা অসুবিধা পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ব্যাপক লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আদলে পারসিয়ান গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (পিজিসিসির) অথবা ফেডারেল রাষ্ট্র গালফ ইউনিয়ন গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তাব আবারো প্রমাণ করলো সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ বিশ্ব শান্তি বাস্তবায়নে বিশেষ প্রয়াসী।
গত ১৪ই মে, সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত খাদেমুল হারামাইন আশ শারীফাইন বাদশাহ আব্দুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে গালফ দেশগুলোর এক সম্মেলনে মুসলিম বিশ্ব তথা ইসলামী উম্মাহর সুবিধা অসুবিধা পরিকল্পনা ও উন্নয়নের ব্যাপক লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর আদলে পারসিয়ান গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (পিজিসিসির) অথবা ফেডারেল রাষ্ট্র গালফ ইউনিয়ন গঠনের পরিকল্পনা প্রস্তাব আবারো প্রমাণ করলো সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ বিশ্ব শান্তি বাস্তবায়নে বিশেষ প্রয়াসী।
ইতিমধ্যে এ পরিকল্পনার একটি খসড়া প্রস্তাব (পিজিসিসির) সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন খোদ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সাউদ আল ফয়সল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই জোট গঠন একদিকে যেমন রক্ষাপ্রাচীর হিসাবে কাজ করবে, পাশাপাশি আরব বিশ্বে তথা উত্তর আফ্রিকা-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শাসন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। মুসলিম বিশ্বের যথাযথ স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিধানে ঐক্যশক্তি হিসাবে অবদান রাখবে। অনেক দেরিতে হলেও বাদশা আব্দুল্লাহর জোট গঠনের এই প্রস্তাব সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো বিশেষ করে পিজিসিসির দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক অভিনন্দিত হবে এবং যত শিগগির এর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে ততই মঙ্গল হবে।
বর্তমান বিশ্বে কয়েকটি জোটই বিভিন্ন শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। হউক তাদের ঐক্যমতে অথবা দ্বিমতে। কারণ, বিশ্বের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সাথে নিন্দা অথবা সমর্থন যাই জানানো হয়ে থাকে, ঐ ঘটনার ব্যাপকতা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় জ্বলতে থাকে। তারমধ্যে জাতিসংঘ, ন্যাটো, ইইউ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে, এগুলো সব সময়ই মুসলিম বিশ্বের স্বার্থের প্রতিকূলেই হয়ে থাকে। তাই, বিশ্বের মুসলমানদের অনুকূলে একটি সহায়ক জোট শক্তির বড়ই প্রয়োজন ছিল। বর্তমান জোটের রূপরেখা হতে পারে ন্যাটোর আদলে অথবা (ইইউ)-এর আদলে। তাতে বিশ্বে শান্তি স্থিতিশীলতা আনয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেই আশা করা যায়। তবে মুসলিম বিশ্বের জোট যেন ওআইসি-এর আদলে না হয়। কারণ, বাদশাহ্ আব্দুল্লাহ যেভাবে বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে আন্তঃধর্মীয় ডায়ালগ একের পর এক বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বহায়েছে এবং বিশ্বে মুসলিম বিশ্বের মধ্যমণি সৌদি আরবের বাদশাহ-এর নেতৃত্বকে বিশ্ব শান্তি আনয়নের সহায়ক ভূমিকা পালনে অনুকূল ধারণা জন্মিয়েছে, তারই এক ছোট বাস্তবতা হয়তো এই জোট গঠন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই জোট গঠন বাস্তবে রাজনৈতিক ঐক্য, সামাজিক ঐকমত্যের ঐক্য পারস্পরিক সহযোগিতার ঐক্য হবে। তাহলে পরে জোট একটি বাস্তবিক শক্তি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে।
এ জোটের আওতাভুক্ত দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদই সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। রাষ্ট্রগুলোর জনসংখ্যা কম হলেও মাথাপিছু আয়ের অনুপাতে, ইইউর দেশগুলোর সদস্যদের চাইতে অনেকাংশে ভাল অবস্থানে আছে। যেই দেশগুলো নিয়ে জোট গঠনের পরিকল্পনা খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে স্ব স্ব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে সেই দেশগুলো হলো-সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। এই ছয়টি দেশ। ইতিমধ্যে সদস্য দেশগুলোর কর্ণধারদের পক্ষ থেকে পরিকল্পনার প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণা করেছে এবং এর জন্য সার্বিক সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।
বাদশাহ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই পরিকল্পনা সম্মেলনে একটি ঐতিহাসিক পরিকল্পনার সূত্রপাত করেছে যা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণে যুগ যুগ ধরে অবদান রাখবে। পরিকল্পিত জোটটি সম্পূর্ণ গণতন্ত্রের আদলে পরিচালিত হবে। যা ভবিষ্যতে বাদশাহ আব্দুল্লাহর ভূমিকার মত আরো ব্যাপক ভূমিকা পালনে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে। এই মহতি উদ্যোগ পরিকল্পনা যা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশস্থ জোট বিরোধী মতবাদে মূলত বিশ্বের ঐক্যকেই বাধাগ্রস্ত করবে। আর সেটা আপামর বিশ্ব মুসলিম ঐক্য মূলেই করাঘাত করবে।
এই খসড়া প্রস্তাবটি যেহেতু এখনো কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি হয়তো আগামী বৈঠকে তা সম্পন্ন হবে, এর মধ্যে মুসলিম বিশ্ব তথা আরব বিশ্ব দেশগুলোর ব্যাপক স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়ক পরিকল্পনা খসড়া যেন চূড়ান্ত হয় তা হতে পারে। উক্ত দেশগুলোর সামরিক প্রধানদের নিয়ে বৈঠক, রাজনৈতিক প্রধানদের নিয়ে বৈঠক, অর্থনৈতিক প্রধানদের নিয়ে বৈঠক, কূটনৈতিক প্রধানদের নিয়ে বৈঠক, সর্বোপরি একটি ব্যাপক স্বার্থ সংরক্ষণমূলক জোটের অভ্যুত্থানের আশা নিয়ে এই জোট গঠনের অন্যতম সহায়ক নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালনকারী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সউদ আল ফয়সল আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতৃত্ব দানকারী ভূমিকার জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত এবং এই জোটও তাদেরই উন্নয়ননির্ভর ফল। যা বিশ্ব শান্তি-শৃক্মখলা সৌহার্দ্য রক্ষা ও হানাহানি সন্ত্রাস সর্বোপরি জাতিগত দ্বনদ্ব নিরসনে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। এর জন্য প্রয়োজন ঐক্যশক্তির উদ্বোধন। ঐক্যের জয়গান এবং যে কোন মূল্যে ঐক্যের অক্ষুণ্ণতা বজায় রাখার অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া। এতেই আপাত দৃষ্টিতে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ অনেকাংশেই সংরক্ষিত হবে। আরব বিশ্বে শত্রু শক্তির হস্তক্ষেপের মাত্রা আরো কমে আসবে এবং নিজ নিজ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর আরো ক্ষমতা বাড়বে। মোটকথা, আশা করা যায়, বিশ্বের বুকে এই জোটটি জাতিসংঘের পরে অন্যতম শক্তিশালী জোটের ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান বাংলাদেশ এ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ সোসাইটি ঢাকা-বাংলাদেশ। menamulhaq33@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন