মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১২

পারমাণবিক অস্ত্র ও ইরান



ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছে। চার সপ্তাহ আগে ইস্তাম্বুলে ইরানের সাথে ৫+১ গ্রুপের (জাতিসঙ্ঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি) আলোচনা শুরু করার জন্য কি ওয়াশিংটন আহ্বান জানিয়েছিল? ওই আলোচনা বৈঠকটি হচ্ছে ইতিবাচক প্রথম পদক্ষেপ। ইসরাইল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় আগাম হামলা চালাবে বলে কয়েক মাস ধরে জল্পনা-কল্পনার পর এখন কূটনৈতিক সমাধানের একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এখন সবার মনোযোগ বাগদাদের দিকে নিবদ্ধ। কারণ সেখানে ২৩ মে দ্রুত একটি চুক্তি স্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনার টেবিলে ইরানের আরো অধিক গঠনমূলকভাবে ফিরে আসাটা হচ্ছেÑ স্পষ্টত একটি শাণিত পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ। ইরানের মুখ্য আলোচক সাঈদ জালালি আলোচনার পূর্বশর্ত আরোপ করায় অন্যান্য দেশ তা মেনে নেয়নি এবং এর ফলে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দফা আলোচনা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ২০১১ সালের শেষ থেকে এ পর্যন্ত তেহরান সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়। জাতিসঙ্ঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার বক্তব্যে বলেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ওয়ার্ল্ড অব হার্ট বা ক্ষতিকর বিশ্ব সৃষ্টির মাধ্যমে দুর্দিন বা কষ্টকর অবস্থা নিয়ে এসেছে। আমেরিকা এখন ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ব্যবসায় পরিচালনাকারী যেকোনো বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইরানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আগামী জুলাই মাসে এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার কথা। ইরাক আগ্রাসনের কিছু দিন পর ২০০৩ সালে সর্বশেষ, ইরান মনে হয় সহযোগিতা করতে আগ্রহী হলো। জর্জ বুশ ইরানকে শয়তানের অক্ষশক্তি নামে আখ্যায়িত করেছিলেন (অপর দুই দেশ হলো ইরাক ও উত্তর কোরিয়া)। ইরানও ইরাকের ভাগ্যবরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করে ইরান পরমাণু বিস্তার রোধ চুক্তি তথা এডিশনাল প্রটোকলে স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তির কারণে আইএইএ পরিদর্শকদের ইরানে প্রবেশের অধিকার আরো বেড়েছে। দু’বছর পরে ইরাকে যখন আমেরিকার অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না, তখন ইরান তাদের দেশে আগ্রাসনের আশঙ্কা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে মনে করেছিল। সেই সাথে, তার প্রতিজ্ঞা থেকে সরে এসেছে। 
কিন্তু চাপের কারণে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তাতে কখনো যথাযথ ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন ঘটে না। সঠিক ইচ্ছার মাধ্যমে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা যায়। পুনরায় শুরু হওয়া আলোচনা ইরানকে একটি নতুন পাঠ গ্রহণের ব্যাপারে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হবে এবং মারাত্মক বিপজ্জনক সঙ্কটকে শান্ত করতে পারবে। কিন্তু সন্দেহবাদীরা মনে করে, ‘ইরান সরকার সময় কাটানোর জন্য খেলছে। তারা একটি ুদ্র পরমাণু অস্ত্র তৈরি করার কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সর্বনাশ বা বিপর্যয় যা হওয়ার হয়ে গেছে। ইরানকে থামিয়ে দেয়ার ব্যাপারে খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। ইরান ইতোমধ্যে পরমাণু শক্তি অর্জনের এত দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে যে, এখন অবশ্যই প্রধান প্রচেষ্টা হওয়া উচিত সৌদি আরব ও মিসরের মতো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী পরমাণু শক্তিগুলোকে একইপথ অবলম্বন করা থেকে বিরত রাখা।’
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতার বিষয়টি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর একটি হচ্ছে ইরান ইউ-২৩৫-এর ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। এটাকে দ্রুত উচ্চসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামে (এইইইউ) রূপান্তরিত করা যায়। এই অস্ত্র গ্রেড হচ্ছে সাধারণত ৮৫ শতাংশ অথবা ইউ-২৩৫-এর বেশি। কিন্তু সেখান থেকে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ পেতে তুলনামূলকভাবে কম সময় লাগবে। দ্বিতীয়ত, ইরান তার গ্যাস সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা কাজে লাগিয়ে তার মজুদ করা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিম্নসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে (এলইইউ) ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে পারে। তৃতীয়ত, একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সংযুক্ত করার জন্য ইরান ুদ্র ও হালকা পরমাণু অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। সবদিক বিবেচনা করলে বলা যায়, ইরান এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। ইরানের ইতোমধ্যে প্রায় এলইইউ-এর ৩ দশমিক ৫ শতাংশের প্রায় ৬০০০ কেজি রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচটি বোমা সহজেই উৎপাদন করা যায়। এই বোমাগুলো ওয়েপন্স গ্রেড এইইইউ মূল্যায়নের সমান। পবিত্র কোম শহরের কাছে নতুন ফরদো সমৃদ্ধকরণ স্থানে চারটি সেন্ট্রিফিউজ কেসকেইড ব্যবহার করে এবং প্রধান নাতানজ পরমাণু স্থাপনায় আরো ১৫টি অতিরিক্ত ক্যাসকেইড ব্যবহার করে (প্রত্যেকটিতে ১৬৪ থেকে ১৭৪ সেন্টিফিউজ রয়েছে)। সম্প্রতি ১৯.৭৫ শতাংশ এলইইউ-এর তিন গুণ উৎপাদনের মাধ্যমে এক মাসে প্রায় ১৩ কেজি উৎপাদিত হচ্ছে। এর এখন ১৫০ কেজি মজুদ থাকতে পারে, এমনকি ১৮৫ কেজির কাছাকাছি থাকাও সম্ভব। মাঝারি পর্যায়ের অত্যাধুনিক অন্তস্ফোটন ডিভাইস তৈরি করার জন্য ৮৫ কেজি মজুদ প্রয়োজন। অবশ্য প্রথম বোমা তৈরির জন্য প্রাথমিক ওয়াচ স্টেজের কারণে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ এলইইউ-এর দ্বিগুণ উপাদান প্রয়োজন হবে।
আইএইএ’র নভেম্বরের রিপোর্টে আভাস দেয়া হয় যে, ইরান সম্ভবত একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত করে ব্যবহার করার জন্য ইতোমধ্যে একটি অত্যাধুনিক ডেটোনেশন সিস্টেম পরীক্ষা করেছে। ২০০৪ সালের আগে সম্ভবত ওই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। আইএইএর দেয়া তথ্য মতে, কর্ম এবং গোয়েন্দা সূত্র ধারণ করেছে পরমাণু অস্ত্রের ব্যাপারে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা হচ্ছেÑ দেশটি এনপিটি ত্যাগ করলে এবং তাদের সব কর্মসূচি পরিত্যাগ করলে একক ক্রুড ডিভাইস তৈরির জন্য কয়েক মাস এবং তিন অথবা চারটি পরমাণবিক অস্ত্রের কারখানা এবং সলিড ফুয়েলড ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য দুই বছরের বেশি সময় লাগবে। লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) পারমাণবিক বিস্তাররোধ বিশেষজ্ঞ মার্ক ফিটজ প্যাট্রিক এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক নন প্রোলিগারেশন পলিসি এডুকেশন সেন্টারের (এনপিইসি) গ্রেগ জোনস ইরানের পরমাণু বোমা তৈরির টাইম স্কেলের ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। জোনস মনে করেন, ইরান অধিকতর দ্রুততার সাথে একটি পরমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারবে। কিন্তু উভয়ে একমত হন যে, ইরান ইতোমধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু সংগ্রহ করেছে। এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শুধু রাজনৈতিক সবুজ সঙ্কেত প্রয়োজন। ওবামার কাছেও বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। সাধারণত আমেরিকার নীতি হচ্ছেÑ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য অর্জন থেকে বিরত রাখা। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার সাম্প্রতিক বিবৃতিগুলোতে ইরানকে কেবল পরমাণু অস্ত্র পেতে তথা পরমাণু অস্ত্র তৈরি বন্ধ করতে বলেছেন, ইসরাইল সরকার ও হোয়াইট হাউজের মধ্যে ওটা হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। ইসরাইল সরকার এখনো চাপ দিচ্ছে যে, তাদের রেড লাইন হচ্ছে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হওয়া। মি. ফিটজপ্যাট্রিক পরামর্শ দেন যে, ইসরাইলকে একটি নতুন রেড লাইন ‘অনাক্রমণ বা নিরাপত্তা অঞ্চল’-সংক্রান্ত ধারণার ঘোষণা দিয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইহুদ বারাক গত বছর ওই বিষয়টির উল্লেখ করতে শুরু করেছিলেন। এর মাধ্যমে ইসরাইলের একাকী তৎপরতা চালানোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। ইসরাইল একাকী কাজ করলে একটি সামরিক হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক অগ্রগতিকে অন্তত বন্ধ করে দিতে বা বিলম্বিত করতে পারবে। ইহুদ বারাক উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, ফোরদোতে দ্রুত সেন্ট্রিফিউজের ক্যাসকেইড স্থাপনের মাধ্যমে ইরান চলতি বছর ওই পর্যায়ে চলে যাবে। ফোরদে পরমাণু স্থাপনাটি পাহাড়ের ৮০ মিটার নিচে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে গতানুগতিক বোমা হামলার মাধ্যমে কোনো ক্ষতি করা যাবে না। ইহুদ বারাকের ইমিউনিটি থিওরির ব্যাপারে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল বেনি গানটজ সম্মত নন। 
তিনি হচ্ছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসরাইলি পত্রিকা হারেজ-এর সাথে গত মাসে এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল গান্টজ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করে বলেন, সুস্পষ্টভাবে ইরানের যতই অগ্রগতি হবে পরিস্থিতি ততই খারাপ হবে। এটা হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বছর। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা সময়ে আছি, যখন কিছু একটা অবশ্যই ঘটবে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রোমনি এবং কংগ্রেসের অনেক সদস্যের হতাশার ব্যাপার হচ্ছে, ওবামা হয়তো আরেকটি রেড লাইনে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে হয়তো এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যাতে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখতে পারবে। প্রকাশ্যে কিছু বলা হচ্ছে না, কিন্তু বুশ প্রশাসনের নতুন চিন্তা হচ্ছেÑ ইরানের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা। এই চুক্তির মাধ্যমে কিছু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার অনুমতি দেয়া হবে। ইরান দাবি করে আসছে, এনপিপির শর্তাধীনে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার আছে। ফিটজ, প্যাট্রিক সতর্ক করে দেন যে, এটাকে একটা প্রস্তাবের অংশের চেয়ে একটি সফল আলোচনায় ধারণাগত শেষ পয়েন্ট হিসেবে দেখা উচিত। এনপিইসির ডাইরেক্টর হেনরি সোকোলস্কি মনে করেন, এ ধরনের চুক্তি কোনো কাজে আসবে না। ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার অনুমতি দিলে দেশটির পরমাণু সক্ষমতা বজায় থাকবে এবং যেসব দেশ পরমাণু ক্ষমতা অর্জনে প্রত্যাশী, তাদের জন্য একটি বিপজ্জনক উদাহরণ সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই তাকে থামানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ইরানকেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে যে, পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পথে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ নিলে তাকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। আইএইএ-তে ইরানি দূত আলী আসগর সুলতানি বলেছেন, ইরান কখনো তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না। ফোরদো হচ্ছে একটি নিরাপদ এলাকা। সেটাকে বন্ধ করে দেয়ার কোনো যুক্তি নেই।
ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে বলেছেন, পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী বা মালিক হওয়া একটি মারাত্মক পাপ। এই বক্তব্যের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্রের ব্যাপারে তার নমনীয় ভাব প্রকাশ পেয়েছে। ইরানের সত্যিই পরমাণু অস্ত্র অর্জনের কোনো ইচ্ছা না থাকলে দেশটির সম্মানজনকভাবে বেরিয়ে আসার পথ আছে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা না হলে, ইরানকে নিশ্চিতভাবে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞার মোকাবেলা করতে হবে এবং সামরিক হামলার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পাবে। 
দি ইকোনমিস্ট থেকে (সংক্ষেপিত)
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন