রবিবার, ২৪ জুন, ২০১২

স্বার্থরক্ষার আত্মঘাতী থিওরি বাংলাদেশকে একঘরে করে ফেলছে



মো হা ম্ম দ জ য় না ল আ বে দী ন
ভাগ্যবিড়ম্বিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়দানের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির এখন দেশের স্বার্থরক্ষার কথা মনে পড়েছে। তিনি বলছেন, দেশের সুদূরপ্রসারী স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কৌশলগত চাবিগুলো, তথা সার্বিক স্বার্থ ভারতের হাতে তুলে দিয়েছেন কিংবা দিতে সাহায্য করেছেন। তখন তাদের দেশের স্বার্থের কথা একবারও মনে পড়েনি। কারণ যে কোনো বিষয়ের সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা তারা মানেন না। তারা তাদের মতো করে সবকিছুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন। ‘বন্ধুত্ব’ ‘গণতন্ত্র’ ‘মানবাধিকার’ ‘স্বার্থ’ ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব’ এমনকি ‘মুক্তিযোদ্ধা’ এবং ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষ’ ও ‘বিপক্ষ শক্তি’ ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি বিষয়কে তারা ভিন্নভাবে তাদের মতো করে সংজ্ঞায়িত করছেন। দুর্মুখ মনে করে এটা তাদের উদ্ভাবিত ডিজিটালি কায়দার বহির্প্রকাশ।
সে ধারাবাহিকতায় জীবন রক্ষার জন্য আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের মৃত্যুপুরীতে ঠেলে দেয়ার মধ্যে দেশের স্বার্থ আবিষ্কার করছেন। অথচ ভারতকে বিনা পয়সায় রাস্তাঘাট, নৌপথ, রেলপথ, বন্দর, শিল্প-বাণিজ্য, জায়গা-জমি দিয়ে দেয়া কিংবা বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যদের আসতে দেয়ার চুক্তি করা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হলেও তাদের দৃষ্টিতে নয়। কারণ ভারত তাদের বন্ধু—এমন বন্ধু যে, ভারত প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছে দীপু মনিরা বাংলাদেশে সঙ্কটে পড়লে ভারত চুপচাপ বসে থাকবে না। তাদের উদ্ধার করবে। ভারত হতে প্রায়ই খবর আসে দীপু মনি গংদের উদ্ধারের জন্য কলকাতা-আগরতলায় ভারতীয় হেলিকপ্টার তথা বিমানবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। দীপু মনিরা এ ধরনের আগ্রাসী ও আপত্তিকর বক্তব্যের কোনো প্রতিবাদ করেননি। অনেকেই মনে করেন, এভাবে নগ্ন অভয়দান তো দেশের স্বার্থ অকাতরে বিলিয়ে দেয়ার প্রতিদান। আর এরাই বলছেন, দেশের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে না। দীপু মনিদের কাছে যে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত নয়, তার বহু উদাহরণ দেয়া যায়।
কিন্তু মিয়ানমারের মরণাপন্ন মুসলমানদের আশ্রয় দিলেও কোনোখান থেকে কোনো প্রতিদান পাওয়া যাবে না। সুতরাং তাদের আশ্রয় দেয়ার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া অনেক বিশ্লেষকের (যারা দীপু মনিদের উদ্ধারকর্তার চানক্য নীতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন) মতে, আমেরিকার নব্য এবং মরহুম কমিউনিজম ও ভেঙে যাওয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক বরকন্দাজ গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী দীপু মনিদের বান্ধব এ দেশটি তার ঘরের দরজায় রোহিঙ্গা মুসলিমবিরোধী গণহত্যা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি। যেন কিছুই হচ্ছে না। তাদের মতে, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের অহেতুক বিরোধ সৃষ্টি ও তা জিইয়ে রেখে বাংলাদেশকে চারদিক থেকে শত্রুবেষ্টিত করার লক্ষ্যেই এ দাঙ্গাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা বাংলাদেশে তীব্র রাজনৈতিক গোলযোগ সৃষ্টি (দীপু মনিদের না মুসলিম না হিন্দু সম্পাদক এরই মধ্যে আরেকটি যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন) হলে তা দমন কিংবা দীপু মনিদের উদ্ধারের নামে ভারতীয় সৈন্যদের সম্ভাব্য হামলা থেকে বাংলাদেশের মানুষ যাতে সীমান্তবর্তী আরাকানে তথা মিয়ানমারে কোনো স্থান না পায় সে উদ্দেশ্যেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করানো হয়েছে।
আরাকানে মুসলমানদের সামান্যতম নিরাপত্তা নেই— এটা জেনেও সরকার তাদের অন্তত শিশু ও মহিলাদের বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে মানবতাবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপদগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়া প্রত্যেক মানুষেরই মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। আজকে বিপন্ন মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণের যে নজির সরকার স্থাপন করেছে, আগামী দিন আমরা তেমন সমস্যায় পড়লে বিশ্বের কেউই আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। যেভাবে জাতিসংঘ, আমেরিকা, কানাডার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তার প্রতিফল একদিন এ দেশের সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হয় কিনা—এখন তা-ই দুশ্চিন্তার কারণ
হয়ে দাঁড়াবে।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে খোদ জাতিসংঘকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা কেবল ভবিষ্যত্ই বলে দেবে। যে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ এলাকায় আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে পাঠাচ্ছি শান্তি রক্ষার জন্য, মানুষের জীবনহানি বন্ধ করার জন্য, তেমনি বিপন্ন মানুষই আমাদের দরজায় জীবন রক্ষার জন্য হাতজোড় করে আশ্রয় চায়, আর আমরা তাদের রক্ষায় সামান্যতম ভূমিকা রাখতে পারছি না। তাদের নৌকায় কিছু খাবার আর জ্বালানি তেল দিয়ে সহায়তা করার নামে আমরা তাদের সঙ্গে নির্মম কৌতুক করছি।
প্রবাসী বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান সরকারের একমাত্র বন্ধু এই ভুয়া পরাশক্তি তার প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারেই প্রায়ই অহেতুক নাক গলায়। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এমনকি আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু মিয়ানমারে মুসলিম নিধন প্রসঙ্গে দেশটি একটি কথাও বলছে না। কারণ সে দেশেই এমন নারকীয় কাণ্ড অহরহ ঘটে। তারা (প্রবাসী বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষক) মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের এ ভূমিকার পেছনে বন্ধু দেশটির পরামর্শ কাজ করছে। এ কারণেই দীপু মনিরা আমেরিকা, কানাডা এমনকি জাতিসংঘের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে সাহস দেখাচ্ছেন। তাদের মতে, ওই দেশটিই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপনের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। এ কারণেই বারবার ঘোষণা এমনকি চুক্তি স্বাক্ষরের পরও মিয়ানমার হয়ে চীন তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সড়ক-সংযোগ হচ্ছে না। মিয়ানমারকে বোঝানো হচ্ছে, তেমন সড়ক হলে মিয়ানমারের স্বার্থ এমনকি আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিপন্ন হবে। আসল কারণ হলো—এই ভুয়া পরাশক্তির আশঙ্কা, তেমন সড়ক হলে বাংলাদেশকে আর তার ‘রাডার’-এর আওতায় আটকে রাখা যাবে না।
বাদবাকি বিশ্ব থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতেই ওই ভুয়া পরাশক্তি চীনকে কোণঠাসা করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার সঙ্গে দহরম মহরম করলেও আমেরিকাকে এ অঞ্চলে সামান্যতম খবরদারিও করার সুযোগ দিতে রাজি নয়। সে আমেরিকার কাছেও এ বার্তা পাঠাতে চায় যে, আমেরিকাকে এ অঞ্চলে নাক গলাতে দেয়া হবে না। আমেরিকার প্রভাব ও মোড়লিপনা এখানে অকার্যকর।
দীপু মনিদের অভিযোগ : আগে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো ভূমিকা রাখছে না। সুতরাং আবার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ এ সমস্যাকে আরও ভারি করতে চায় না। এ ধরনের যুক্তি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘আগে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া হয়নি’—এ যুক্তি দেখিয়ে আমরা একটি জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। ফিরিয়ে না নেয়ার জন্য আমাদের ব্যর্থতা কোথায় তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? এ সমস্যা নিয়ে কখন কোনো দেশের সঙ্গে আমরা অর্থবহ দেন-দরবার করেছি? ক’বার আমরা বিষয়টি জাতিসংঘ, ওআইসি এমনকি সার্কে উত্থাপন করেছি? এটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ভারতীয়করণের পরিণতি। সারাবিশ্বে আমাদের পাশে সত্যিকার অর্থে দাঁড়ানোর মতো এখন আর কোনো বন্ধু নেই। বাদবাকি বিশ্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে আমরা কি আমাদের একক প্রচেষ্টায় আগে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে পারব? পারলে এতদিন পারিনি কেন? আমাদের ভূখণ্ড থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে যে প্রভাব ও লবিং দরকার, সেটা আমাদের নেই। তেমন শক্তি ও প্রভাব থাকলে আমরা এমন আচরণ করতে পারতাম। বরং উচিত ছিল জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতৃত্ব দানকারী দেশগুলোর সঙ্গে বসা। তাদের অনুরোধ পূরণে শর্ত জুড়ে দেয়া। তাতে আমাদের সব কূলই রক্ষা পেত। আমরা বন্ধুহীন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তাম না। কেউ বলতে পারত না আমরা অন্যের পরামর্শে চলি। আমাদের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতি অন্যের ইঙ্গিতে চলে।
সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরে যা ঘটছে, তা দেখে গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক, মুসলিম বিশ্ব হতাশ। এটা কোন গণতন্ত্র? গণতন্ত্রের লেবাস পরে ‘ক্ষমতাতন্ত্র’ ও ‘ইচ্ছেতন্ত্র’ ‘লাঠিতন্ত্র’ ‘ডাণ্ডাবেড়ি’ ‘গুম-অপহরণ’ ‘রিমান্ড’ ‘মিথ্যে মামলা’র সংস্কৃতি, সংসদ ও বিচার বিভাগকে মুখোমুখি হওয়ার ডিজিটালি তেলেসমাতি দেখে বিশ্ববিবেক আমাদের নিন্দার চোখে দেখে। তাদের উপসংহার : গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যে সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে তার প্রতিপক্ষকে বঞ্চিত রাখে, তাদের পুলিশ বুটের নিচে চেপে ধরে, নানা অজুহাতে গরু-ছাগলের মতো ধরে নিয়ে যায়, ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে আনে, সাজানো ও মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের কারারুদ্ধ কিংবা রিমান্ডের নামে লাঠিপেটা করে, রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আর ফেরত দেয় না—তাদের স্বজনরা জানে না অপহৃত ব্যক্তি বেঁচে আছে না মরে গেছে। যে দেশে বেডরুম থেকে রাস্তাঘাট কোথাও মানুষ নিরাপদ নয়, সে দেশের সরকারের কাছে ভিন্নদেশী রোহিঙ্গাদের নিশ্চিত মৃত্যু কোনো ব্যাপারই নয়।
এসব কারণে সর্বোপরি ভ্রান্ত পররাষ্ট্রনীতির ফলে আমরা দিন দিন সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে এখন একঘরে হয়ে পড়ছি। পররাষ্ট্রনীতিকে একটি বিশেষ বন্ধুর খোয়াড়ে বন্দি করছি। আমরা চীনেরও বন্ধু নই, আমেরিকারও নই। জাপান কিংবা মুসলিমবিশ্ব আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে। আমরা জাতিসংঘকে পাত্তা দিচ্ছি না। আমরা যাচ্ছি কোন দিকে? আমাদের বহু পরীক্ষিত বন্ধু এখন আর আমাদের পক্ষে নেই। যারা বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলবে, তারা এখন আমাদের ওপর বিরক্ত। আমরাই আমাদের সারাবিশ্ব থেকে গুটিয়ে ফেলে মনে হয় ভুটান ও সাবেক সিকিমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সিকিম তো প্রায় চার যুগ আগেই বিশ্ব মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। আর ভুটানের রাজা কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে তেমন বিদেশ সফর করতে হয় না, তাদের তেমন কেউ ডাকেও না, ডাকার প্রয়োজনও বোধ করে না। কারণ সারাবিশ্ব জানে তাদের কাজটি অন্য কেউ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে তেমন অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
একটা দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হলো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি। দেশি-বিদেশি অনেক পর্যবেক্ষকের অভিযোগ, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতীয় গণ্ডিতে বন্দি হয়ে গেছে। তাদের মতে, মুখে না বললেও সারাবিশ্ব অনুভব করে বাংলাদেশ এখন কার নির্দেশ চলে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ ধারণা পাল্টে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। কারণ কারও নির্দেশে চললে কোনো দেশ আর প্রকৃত অর্থে সার্বভৌম থাকে না। তখন দেশটি সরকার ও পতাকা-সর্বস্ব হয়ে যায়। এ ধরনের দেশের সরকারও বদল হয় নিয়ন্ত্রক মুরব্বি দেশের ইচ্ছায় ও ইঙ্গিতে। এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন এমনকি শিল্প-সংস্কৃতি মুরব্বি দেশটি নিয়ন্ত্রণ করে। মুরব্বি যা যা চাইবে, ক্ষমতাসীনরা তা-ই দিতে অনুগত থাকে। ক্ষমতাসীনরা বেয়াড়া আচরণ করলে নতুন কাউকে আনা হবে। নতুন যারা আসবে, তারাও হবে মুরব্বি’র আশীর্বাদপুষ্ট ও অনুগত। মুরব্বি তাদের দাবার ঘুঁটির মতো তার স্বার্থ ও ইচ্ছে অনুযায়ী চালাবে। তাদের বর্তমানে দাবার ঘুঁটি না বলে ‘রোবট’ বলা যেতে পারে। আমরা তেমনটি হতে চাই না। আমরা আমাদের প্রতিভা ও দূরদর্শিতা দিয়েই আমাদের নীতি নির্ধারণ করব। আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে জাতি এত ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে পারে, সে জাতি বাইরের হস্তক্ষেপমুক্ত বিদেশ নীতিও অনুসরণ করতে পারে। আমাদের রোবট মনে করা হলে ভুল হবে।
পৃথিবীতে বহুদেশে যুগে যুগে এমন রোবট-সদস্য মানুষ এসেছে। রোবটের নিজস্ব কোনো বিচার-বুদ্ধি নেই। সে একটা যন্ত্রবিশেষ, তার ভেতর যা যা প্রতিস্থাপন করা হয়, সে শুধু তাই করতে পারে। পাখিদের সঙ্গে তুলনা করলে এরা ‘তোতা পাখি’ বিশেষ। তোতা পাখিকে যা শেখানো হয় সে কেবল তা-ই বলতে পারে। আর মানুষরূপী ‘তোতা পাখি’দের যা করতে বলা হবে, তার বাইরে তারা কিছু্ বলতে বা করতে পারে না। তাদের এক ধরনের প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে হয়। যেমনটি বলা উচিত, তারা তেমনি বলতে পারে না। এসব বিদেশি চর ও স্বার্থান্ধ প্রতিবন্ধীদের কারণে কোনো কোনো স্বাধীন দেশ এক সময় কাশ্মীর-সিকিমের ভাগ্যবরণ করে এবং প্রতিবন্ধীরা হয় মীর জাফর, শেখ আবদুল্লাহ, নূর মোহাম্মদ, তারাকি, হাফিজুল্লা আমিন, লেন্দ্রুপ দর্জিদের মতো গণনিন্দিত দেশদ্রোহী। ইতিহাস যেন আমাদের সেভাবে চিত্রিত না করে সে ব্যাপারে সবারই সচেষ্ট ও সতর্ক থাকা উচিত।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক ও গবেষক
noa@agni.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন