মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১২

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুরসির বিজয় : মিসর হোক গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র

মিসরের বহু প্রত্যাশিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড দলের প্রার্থী ড. মোহাম্মদ মুরসি ‘আরব বসন্তের প্রথম প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে বিজয় অর্জন করেছেন। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী মুরসি তার প্রতিদ্বন্দ্বী আহমদ শফিকের চেয়ে ৯ লাখ ৩০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। শফিক পতিত ও দণ্ডিত স্বৈরাচারী হোসনি মোবারক আমলে নিযুক্ত সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী। বহু বছর ধরে নির্যাতিত এবং বিশাল সাংগঠনিক নেটওয়ার্কের অধিকারী মুসলিম ব্রাদারহুড বা ইখওয়ানুল মুসলিমিন প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি ভোট পেয়েছেন চার কোটি ২৯ লাখ ১১ হাজার ৩৫০, যা মোট ভোটের ৫২ শতাংশ। অপর দিকে আহমদ শফিক পেয়েছেন চার কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৭ ভোট, যা মোট ভোটের ৪৮ শতাংশ। রাজধানী কায়রোতে মুরসি পেয়েছেন ৪৮ লাখ ৮৬ হাজারের কিছু বেশি। শফিক পেয়েছেন তার চেয়ে ৩১ হাজার কম। এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ব্রাদারহুড প্রধান ড. মোহাম্মদ বাদি বলেছেন, মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে ড. মুরসির বিজয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ জন্য মহান আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। দলের নেতাকর্মীরা রাত জেগে ভোরে তাদের জয়ের খবর পান। মানুষ তাহরির চত্বরে উৎসবে মেতে ওঠে। তারা জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করে সমবেত কণ্ঠে তাকবির ধ্বনির সাথে নানা স্লোগান দেন। সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি ঘোষণা করেন, মুবারকবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের অধিকার আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে। তিনি বলেন, মুসলিম-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে দেশের সবাইকে আমি নিজের পরিবারের লোক মনে করব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সেবায় কাজ করে যাবো। তিনি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেন, কোনো প্রকার প্রতিশোধ নেয়া হবে না। মোহাম্মদ মুরসি সুশীল, সংবিধানকেন্দ্রিক ও গণতন্ত্রী মিসর গঠনের অঙ্গীকার করেন। এ দিকে পরাজিত আহমদ শফিক ফলাফল এখনো মেনে নেননি, তা ‘বেসরকারি’ বলে। তবে কয়েক দিন লেগে যাবে সরকারিভাবে ফল প্রকাশ করতে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, গত মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় প্রধান দুই প্রার্থীকে নিয়ে দ্বিতীয় দফা ভোট গ্রহণ করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছিল সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল (এসসিএএফ)। মিসর মুসলিম বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাষ্ট্র। পিরামিডখ্যাত দেশটি হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনবহুল। প্রাচীনকাল থেকে মিসর নানা ঘটনাবহুল পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। নিকট অতীতে স্বৈরশাসক মোবারকের প্রায় তিন দশক স্থায়ী কৃষ্ণ যুগের অবস্থান ঘটে গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানে। তবে জনগণের শাসন তথা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে বাধাবিপত্তি দূর হয়নি। অন্তর্বর্তীকালের জন্য ক্ষমতাসীন সামরিক কর্মকর্তাদের টালবাহানায় পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। ইতোমধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, যাতে সম্মিলিতভাবে ইসলামপন্থীরা ভালো ফল করেছেন। তবে জাতির একান্ত প্রত্যাশিত এই নির্বাচনের ফল বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। বন্দী একনায়ক হোসনি মোবারকের দণ্ডাদেশ হলেও তার দোসররা এখনো প্রশাসনে প্রভাবশালী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল বানচালের নানা চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক দিকে সেকুলার ও বামপন্থীরা চান না ইসলামী আদর্শের প্রবক্তা ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসুক। অন্য দিকে স্বৈরাচারী মোবারক আমলের বেনিফিশিয়ারি ও তার অনুসারীরা শফিককে রাষ্ট্রপ্রধান পদে দেখতে চান। এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদ নিজেদের ক্ষমতা আরো বাড়িয়েছে। এতে নির্ধারিত সময়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে কি না তাতে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আমরা ভ্রাতৃপ্রতিম মিসরের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং আশা করি, তিনি দেশকে শান্তি, স্থিতি ও উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে সফল হবেন। গণতন্ত্র ও সুশাসন কায়েমের পথে সব চক্রান্ত ও প্রতিবন্ধক অবিলম্বে নস্যাৎ হোক। মিসর স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন