ক্যাথেরিন ওয়েবার
মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৩১ বছরের পুরনো জরুরি আইন প্রত্যাহার করেছে। ওই আইন নিরাপত্তা বাহিনীকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করেছিল। কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যে কাউকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পেয়েছিল। এই আইনের বলেই আরব বসন্ত চলাকালে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে অনেকের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদকারীদের মধ্য থেকে কতজনকে এভাবে গ্রেপ্তার কিংবা গুম করা হয়েছে? মানবাধিকার কর্মী হোসসাম বাহগাত ইসরায়েলি সংবাদ সংস্থা হারেজকে বলেছেন, এর সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন। অগণিত এই সংখ্যা। এই বার্তাই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তারা মনে করত, তারা সব আইনের ঊর্ধ্বে। সেই বাহিনী এতটা উচ্ছৃঙ্খল থাকতে পারে না। তাদের নির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনবহির্ভূত যেকোনো রকম সুযোগ তারা ভোগ করতে পারে না। এই মন্তব্যকারী এবং মানবাধিকার কর্মী হোসসাম বাহগাত মিসর থেকে জরুরি আইন প্রত্যাহার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন।
জরুরি আইন জারি হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের মৃত্যুর পর, ১৯৮১ সালে। এই আইন এর সাহায্যে তারা কোনো কারণ না দেখিয়েই যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারত। শুধু তা-ই নয়, তারা কাউকে ইচ্ছা করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলও দিতে পারত।
অসংখ্য মিসরীয় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে দিন কাটাচ্ছে এ ধরনের প্রহসনমূলক বিচারের কারণে। এদের অধিকাংশই দেখা যাবে কোনো অপরাধের সঙ্গেই যুক্ত নয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরব বসন্তের সূত্র ধরে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীর ভাগ্যেও একই দুর্ভোগ জুটেছে।
মিসরের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও মানসিক নির্যাতন হয়েছে। বিশেষ করে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষের কথা ধরা যেতে পারে। মিসরের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলমান, মাত্র ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু। তাদের কিছু মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড ক্রিস্টিয়ান সলিডারিটি নামক একটি ধর্মীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের নেতা কিরি ক্যাঙ্খওয়েদ এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি কিন্তু বিষয়টিকে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরুর মতো বিভাজন করতে নারাজ। তাঁর মতে, এই আইন প্রত্যাহার করার কারণে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নির্বিশেষে সবার জন্যই উপকার হবে। কারণ, আইনের যে কুফল তা জাতীয়ভাবে সবাই ভোগ করেছে। তিনি বলেন, এই আইনটি করা হয়েছিল ক্ষমতা একচ্ছত্র করার জন্য। সমাজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
তবে মিসরে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবার জন্য তেমন কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করেনি। এই আইন সেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরই প্রয়োগ হয়েছে বেশি, যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে।
হোসনি মুবারকের পতনের পর যে সামরিক শাসকরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তাঁরাও এই আইন প্রত্যাহার করার ব্যাপারে প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন। তাঁরা এখনো বলছেন, এই আইনটি পুনর্প্রবর্তনের কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা স্পষ্টতই বলছেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসা পর্যন্তই তাঁরা ক্ষমতায় থাকছেন।
সম্প্রতি মিসরের ইতিহাসে এই প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মুহাম্মেদ মুরশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।
যদিও জরুরি আইন প্রত্যাহারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে মিসর, তার পরও আসল প্রাপ্তি নির্ভর করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপর। যদিও নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রাথমিক স্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। তার পরও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সেই নির্বাচনের পর কী ঘটে সে জন্য। আমাদের দেখতে হবে, অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার কিভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় সেদিকেও। মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং পরবর্তী সরকার এলেই আমরা বলতে পারব, মিসর গণতন্ত্রের পথ ধরে কত দূর এগিয়ে যেতে পেরেছে। সেই জন্য আমাদের ১৬ ও ১৭ জুন পর্যন্ত আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, তখনই গণতন্ত্রের প্রথম ধাপে পা দেবে মিসর। অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্ব।
লেখক : ক্রিস্টিয়ান পোস্টের সাংবাদিক
ক্রিস্টিয়ান পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৩১ বছরের পুরনো জরুরি আইন প্রত্যাহার করেছে। ওই আইন নিরাপত্তা বাহিনীকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করেছিল। কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যে কাউকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পেয়েছিল। এই আইনের বলেই আরব বসন্ত চলাকালে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া নাগরিকদের মধ্যে অনেকের এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রতিবাদকারীদের মধ্য থেকে কতজনকে এভাবে গ্রেপ্তার কিংবা গুম করা হয়েছে? মানবাধিকার কর্মী হোসসাম বাহগাত ইসরায়েলি সংবাদ সংস্থা হারেজকে বলেছেন, এর সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন। অগণিত এই সংখ্যা। এই বার্তাই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। তারা মনে করত, তারা সব আইনের ঊর্ধ্বে। সেই বাহিনী এতটা উচ্ছৃঙ্খল থাকতে পারে না। তাদের নির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনবহির্ভূত যেকোনো রকম সুযোগ তারা ভোগ করতে পারে না। এই মন্তব্যকারী এবং মানবাধিকার কর্মী হোসসাম বাহগাত মিসর থেকে জরুরি আইন প্রত্যাহার করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন।
জরুরি আইন জারি হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের মৃত্যুর পর, ১৯৮১ সালে। এই আইন এর সাহায্যে তারা কোনো কারণ না দেখিয়েই যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারত। শুধু তা-ই নয়, তারা কাউকে ইচ্ছা করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য জেলও দিতে পারত।
অসংখ্য মিসরীয় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে দিন কাটাচ্ছে এ ধরনের প্রহসনমূলক বিচারের কারণে। এদের অধিকাংশই দেখা যাবে কোনো অপরাধের সঙ্গেই যুক্ত নয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরব বসন্তের সূত্র ধরে হাজার হাজার প্রতিবাদকারীর ভাগ্যেও একই দুর্ভোগ জুটেছে।
মিসরের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরও মানসিক নির্যাতন হয়েছে। বিশেষ করে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষের কথা ধরা যেতে পারে। মিসরের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই মুসলমান, মাত্র ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু। তাদের কিছু মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড ক্রিস্টিয়ান সলিডারিটি নামক একটি ধর্মীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের নেতা কিরি ক্যাঙ্খওয়েদ এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি কিন্তু বিষয়টিকে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরুর মতো বিভাজন করতে নারাজ। তাঁর মতে, এই আইন প্রত্যাহার করার কারণে সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নির্বিশেষে সবার জন্যই উপকার হবে। কারণ, আইনের যে কুফল তা জাতীয়ভাবে সবাই ভোগ করেছে। তিনি বলেন, এই আইনটি করা হয়েছিল ক্ষমতা একচ্ছত্র করার জন্য। সমাজ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
তবে মিসরে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সবার জন্য তেমন কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করেনি। এই আইন সেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরই প্রয়োগ হয়েছে বেশি, যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে।
হোসনি মুবারকের পতনের পর যে সামরিক শাসকরা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তাঁরাও এই আইন প্রত্যাহার করার ব্যাপারে প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন। তাঁরা এখনো বলছেন, এই আইনটি পুনর্প্রবর্তনের কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা স্পষ্টতই বলছেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসা পর্যন্তই তাঁরা ক্ষমতায় থাকছেন।
সম্প্রতি মিসরের ইতিহাসে এই প্রথম সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মুহাম্মেদ মুরশি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে।
যদিও জরুরি আইন প্রত্যাহারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে মিসর, তার পরও আসল প্রাপ্তি নির্ভর করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপর। যদিও নির্বাচনকে গণতন্ত্রের প্রাথমিক স্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। তার পরও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সেই নির্বাচনের পর কী ঘটে সে জন্য। আমাদের দেখতে হবে, অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার কিভাবে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় সেদিকেও। মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং পরবর্তী সরকার এলেই আমরা বলতে পারব, মিসর গণতন্ত্রের পথ ধরে কত দূর এগিয়ে যেতে পেরেছে। সেই জন্য আমাদের ১৬ ও ১৭ জুন পর্যন্ত আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, তখনই গণতন্ত্রের প্রথম ধাপে পা দেবে মিসর। অনুষ্ঠিত হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্ব।
লেখক : ক্রিস্টিয়ান পোস্টের সাংবাদিক
ক্রিস্টিয়ান পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন