ফিস্ক
ভুল জায়গায়, ভুল সময়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতা করার চেয়ে খারাপ কাজ আর কিছু নেই। কায়রোতে হোসনি মোবারকের বিচারকাজ কভার করা প্রসঙ্গে এমন কথাই বলেছেন রবার্ট ফিস্ক। লেবানন থেকে কায়রোতে গিয়েছেন তিনি। আর সেখান থেকেই মিসর, সিরিয়া ও লেবাননের পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন আরেকটি প্রতিবেদন। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেই প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি ভাষান্তর দেওয়া হলো এখানে:
‘এক সপ্তাহ আগে সিরিয়ার হাওলায় যখন গণহত্যা চলছিল, তখন টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছিলেন, তাঁর সেনাবাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী নয়। সিরিয়ার যেকোনো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই একই রকম বক্তব্য দেন আসাদ। এদিকে মিসরে নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছেন আহমেদ শফিক। আর তাঁর মধ্যে আমি দেখতে পাই হোসনি মোবারকের ছায়া। হোসনি মোবারককে মিসরের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করেন। আহমেদ শফিককেও সমর্থন করেছেন তাঁরাই। আর আসাদকেও সিরিয়ার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করেন। তাই মোবারক বা আসাদ সবাই হলেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সমর্থিত একনায়ক। অর্থাত্ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেন। এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলার দরকার আছে?
গত শনিবার মিসরের একনায়ক হোসনি মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর গত রোববার সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল আসাদ বলেছেন, তিনি রয়েছেন হুমকির মুখে। তাঁর দেশের যুদ্ধ বিশ্বের অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। আসাদের এই আশঙ্কা বা হুমকির মানে আমরা বুঝি। সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে লেবাননের ত্রিপোলির ভবিষ্যত্ এখন সন্দেহের বেড়াজালে বন্দী। বেশি দিন আগের কথা নয়। লেবাননের এক বন্ধু আমাকে বলেন, আসাদ যদি বিপদে পড়েন, তাহলে তিনি লেবাননের ভবিষ্যত্ বা অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতিতে বোঝা যায়, লেবানের ওই বন্ধুটি কেন এ রকম কথা বলেছিলেন। সিরিয়া আর লেবাননের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর।
আরব-বসন্তের জন্য এটা একটা খারাপ সময়। ইয়েমেনেও চলছে এখন অস্থির সময়। যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে একের পর এক চালকবিহীন বিমান হামলা (ড্রোন) চালাচ্ছে। আর সে কাজে মার্কিনিদের সমর্থন জোগাচ্ছে ইয়েমেনের সরকার। মিসরে অনেক মার্কিনি রয়েছেন, যাঁরা আহমেদ শফিককে সমর্থন দিচ্ছেন। মিসরের আল হারেম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, শফিকের শাসন হোসনি মোবারকের শাসনের চেয়ে খুব বেশি আলাদা হবে না। শফিকের শাসনামলেও মিসর পরিণত হবে পুলিশি রাষ্ট্রে। শফিকের বিজয়ের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে গেছে মিসরের বিপ্লবের স্বপ্ন। পত্রিকাটিতে আরও বলা হয়, যাঁরা মিসরে বিপ্লব আনতে চেয়েছিলেন, সে জন্য যাঁরা অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের সেই কাঙ্ক্ষিত বিপ্লব আসবে না, যত দিন পর্যন্ত মিসরের প্রচলিত প্রথাগুলো না বদলাবে। মোবারকের শাসনামলে মিসরের কোনো পত্রিকায় এ রকম কোনো লেখা প্রকাশ হওয়ার কথা ভাবাও যায় না। এ রকম কোনো প্রতিবেদন কি লেবাননে পাওয়া সম্ভব? লেবানন বা ইয়েমেন কি তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন নয়? এটা স্পষ্ট যে বদল খুব বেশি হোক বা না হোক, আরব জেগে উঠছে। আরবে বসন্ত আসছে। আর আমি মনে করি, সিরিয়াও জেগে উঠছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, তাঁর দেশের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে, সিরিয়ায় যুদ্ধ পাশের দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে লেবানন। রবার্ট ফিস্ক বলেন, আমি লেবানন ও লেবাননের যারা বাশার আল আসাদকে সমর্থন করছেন, তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। মিসরে শফিকের জয়ের সম্ভাবনা এবং ওয়াশিংটনে যাঁরা শফিককে সমর্থন করেন, তাঁদের নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে শফিকের সমর্থকেরা চাইবেন মিসর ইসরায়েলের সঙ্গে আবার নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করুক। মোবারকের পুরোনো আমল আবার হয়তো নতুন করে ফিরে আসবে। রিপাবলিকানরাও মোবারকের শেষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মিসরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসি হতে পারেন আশার আলো। তবে এ জন্য তাঁকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। দেখাতে হবে যে ইসলামপন্থী সরকার মিসরের অর্থনীতিকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারে—দুর্নীতি দমন করতে পারে। যেমনটা ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ার ইসলামপন্থী সরকার করেছিল।
এবার দেখা যাক সিরিয়ার সীমান্তবর্তী লেবাননকে। সীমান্তবর্তী দেশ লেবানন অনেকটাই স্বাধীন। তাদের গণমাধ্যমও স্বাধীন। লেবাননকে দেখে সিরিয়া স্বাধীনতার শিক্ষা নিতে পারে। কিন্তু সিরিয়ার দুর্ভাগ্য। শুধু স্বাধীনতার অভাবই নয়, দেশটি হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ থেকেই বের হতে পারছে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এ জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেছেন। তিনি সঠিক হতেও পারেন। এটা ঠিক যে লেবানন দিয়ে পাচার হয়েই বাইরে থেকে অস্ত্র ঢোকে সিরিয়ায়।
আর এসব পরিস্থিতিতে মিসরে অশুভ সংকেত দেখতে পাই আমি। শফিক জিততে পারেন, মোবারকের বিচার হতে পারে, আসাদেরও পতন হতে পারে কিন্তু আমি ভয় পাই গৃহযুদ্ধকে। তবে সবকিছুর মধ্যেও টিকে থাকবে লেবানন।
‘এক সপ্তাহ আগে সিরিয়ার হাওলায় যখন গণহত্যা চলছিল, তখন টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছিলেন, তাঁর সেনাবাহিনী এই হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী নয়। সিরিয়ার যেকোনো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই একই রকম বক্তব্য দেন আসাদ। এদিকে মিসরে নির্বাচনে জয়ী হতে যাচ্ছেন আহমেদ শফিক। আর তাঁর মধ্যে আমি দেখতে পাই হোসনি মোবারকের ছায়া। হোসনি মোবারককে মিসরের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করেন। আহমেদ শফিককেও সমর্থন করেছেন তাঁরাই। আর আসাদকেও সিরিয়ার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা সমর্থন করেন। তাই মোবারক বা আসাদ সবাই হলেন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সমর্থিত একনায়ক। অর্থাত্ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা একনায়কতন্ত্রকে সমর্থন করেন। এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলার দরকার আছে?
গত শনিবার মিসরের একনায়ক হোসনি মোবারককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর গত রোববার সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল আসাদ বলেছেন, তিনি রয়েছেন হুমকির মুখে। তাঁর দেশের যুদ্ধ বিশ্বের অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। আসাদের এই আশঙ্কা বা হুমকির মানে আমরা বুঝি। সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে লেবাননের ত্রিপোলির ভবিষ্যত্ এখন সন্দেহের বেড়াজালে বন্দী। বেশি দিন আগের কথা নয়। লেবাননের এক বন্ধু আমাকে বলেন, আসাদ যদি বিপদে পড়েন, তাহলে তিনি লেবাননের ভবিষ্যত্ বা অস্তিত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতিতে বোঝা যায়, লেবানের ওই বন্ধুটি কেন এ রকম কথা বলেছিলেন। সিরিয়া আর লেবাননের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর।
আরব-বসন্তের জন্য এটা একটা খারাপ সময়। ইয়েমেনেও চলছে এখন অস্থির সময়। যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে একের পর এক চালকবিহীন বিমান হামলা (ড্রোন) চালাচ্ছে। আর সে কাজে মার্কিনিদের সমর্থন জোগাচ্ছে ইয়েমেনের সরকার। মিসরে অনেক মার্কিনি রয়েছেন, যাঁরা আহমেদ শফিককে সমর্থন দিচ্ছেন। মিসরের আল হারেম পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, শফিকের শাসন হোসনি মোবারকের শাসনের চেয়ে খুব বেশি আলাদা হবে না। শফিকের শাসনামলেও মিসর পরিণত হবে পুলিশি রাষ্ট্রে। শফিকের বিজয়ের সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে গেছে মিসরের বিপ্লবের স্বপ্ন। পত্রিকাটিতে আরও বলা হয়, যাঁরা মিসরে বিপ্লব আনতে চেয়েছিলেন, সে জন্য যাঁরা অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের সেই কাঙ্ক্ষিত বিপ্লব আসবে না, যত দিন পর্যন্ত মিসরের প্রচলিত প্রথাগুলো না বদলাবে। মোবারকের শাসনামলে মিসরের কোনো পত্রিকায় এ রকম কোনো লেখা প্রকাশ হওয়ার কথা ভাবাও যায় না। এ রকম কোনো প্রতিবেদন কি লেবাননে পাওয়া সম্ভব? লেবানন বা ইয়েমেন কি তাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন নয়? এটা স্পষ্ট যে বদল খুব বেশি হোক বা না হোক, আরব জেগে উঠছে। আরবে বসন্ত আসছে। আর আমি মনে করি, সিরিয়াও জেগে উঠছে।
সম্প্রতি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বলেছেন, তাঁর দেশের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে, সিরিয়ায় যুদ্ধ পাশের দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে লেবানন। রবার্ট ফিস্ক বলেন, আমি লেবানন ও লেবাননের যারা বাশার আল আসাদকে সমর্থন করছেন, তাঁদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। মিসরে শফিকের জয়ের সম্ভাবনা এবং ওয়াশিংটনে যাঁরা শফিককে সমর্থন করেন, তাঁদের নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে শফিকের সমর্থকেরা চাইবেন মিসর ইসরায়েলের সঙ্গে আবার নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করুক। মোবারকের পুরোনো আমল আবার হয়তো নতুন করে ফিরে আসবে। রিপাবলিকানরাও মোবারকের শেষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখাবে। তবে এ ক্ষেত্রে মিসরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোরসি হতে পারেন আশার আলো। তবে এ জন্য তাঁকে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। দেখাতে হবে যে ইসলামপন্থী সরকার মিসরের অর্থনীতিকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে পারে—দুর্নীতি দমন করতে পারে। যেমনটা ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ার ইসলামপন্থী সরকার করেছিল।
এবার দেখা যাক সিরিয়ার সীমান্তবর্তী লেবাননকে। সীমান্তবর্তী দেশ লেবানন অনেকটাই স্বাধীন। তাদের গণমাধ্যমও স্বাধীন। লেবাননকে দেখে সিরিয়া স্বাধীনতার শিক্ষা নিতে পারে। কিন্তু সিরিয়ার দুর্ভাগ্য। শুধু স্বাধীনতার অভাবই নয়, দেশটি হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ থেকেই বের হতে পারছে না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এ জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেছেন। তিনি সঠিক হতেও পারেন। এটা ঠিক যে লেবানন দিয়ে পাচার হয়েই বাইরে থেকে অস্ত্র ঢোকে সিরিয়ায়।
আর এসব পরিস্থিতিতে মিসরে অশুভ সংকেত দেখতে পাই আমি। শফিক জিততে পারেন, মোবারকের বিচার হতে পারে, আসাদেরও পতন হতে পারে কিন্তু আমি ভয় পাই গৃহযুদ্ধকে। তবে সবকিছুর মধ্যেও টিকে থাকবে লেবানন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন