ইউরি আভনেরি | তারিখ: ১৮-০৪-২০১২
যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করবে না। এ বছর তো নয়ই, আসন্ন বছরগুলোতেও নয়। নির্বাচনী বিবেচনা কিংবা সামরিক সীমাবদ্ধতার চেয়েও এই হামলা না করার পেছনে একটি গূঢ় কারণ লুকিয়ে রয়েছে। এ কারণটি হলো, যুক্তরাষ্ট্র যদি তা করে তবে সেটি হবে দেশটির নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। সেই সঙ্গে সারা বিশ্বের জন্যও তা বয়ে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয়।
নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘তুমি যদি কোনো দেশের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি বুঝতে চাও, তবে তার মানচিত্রের দিকে নজর দাও।’ হামলার শিকার হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। এ প্রণালির মধ্য দিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইরাক ও ইরান থেকে বিশ্বের মোট ৪০ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রণালিটি বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে তেলের দাম দ্বিগুণ, তিন গুণ, চার গুণ বেড়ে যাবে। ফলে মার্কিন ও বিশ্ব অর্থনীতিতেও নামবে ধস।
এসব ছোটখাটো বিষয়ও জেনারেল, সেনা বিশেষজ্ঞসহ বিশ্বকে সংকীর্ণ ‘নিরাপত্তা’র ঘেরাটোপ থেকে পর্যবেক্ষণকারী বিজ্ঞ লোকজনের মনোযোগ এড়ায় না।
এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়াটা হবে ইরানে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সহজ একটি পদক্ষেপ। কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপই এ জন্য যথেষ্ট হবে। তবে এটি পুনরায় খুলে দিতে হলে সেখানে মার্কিন নৌবাহিনীর রণতরীতে করে যুদ্ধবিমান পাঠানোই যথেষ্ট হবে না। এই জলসীমাকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আওতামুক্ত রাখতে দেশটির বিশাল অংশ দখল করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এ ক্ষেত্রে ইরানের বিশাল আকৃতির কথা বিবেচনা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এই দেশটি জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির যৌথ আকৃতির চেয়েও বিশাল। কাজেই ইরান দখল করা সহজ হবে না। ইরানে হামলা করা হলে তা হবে অত্যন্ত দীর্ঘ একটি যুদ্ধ। হয়তো বা তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের চেয়েও দীর্ঘতর হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র যে-ই ইরানে হামলা চালাক, মুসলিম দেশটির জন্য এর অর্থ একই হবে। ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান এক ও অভিন্ন হিসেবেই বিবেচনা করে। দুই ক্ষেত্রেই হামলার পরিণতি হবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ। এসব বিবেচনা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেও যেমন ইরানে হামলা চালাবে না, দোসর ইসরায়েলকেও হামলা করা থেকে বিরত রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো রকম অবগত না করে ১৯৫৬ সালে সেই যে ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এর পরও তো ৫৬ বছর পেরিয়ে গেছে। সেই যুদ্ধে বিজয়ের সব অর্জনই নিজের ঝুলিতে পুরেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। এরপর আর কখনোই এ ধরনের ভুল করেনি ইসরায়েল। সিক্স ডে ওয়ার ও প্রথম লেবানন যুদ্ধের আগে ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন পেতে সেখানে বিশেষ দূত পাঠায় ইসরায়েল। অনুমতি পাওয়ার পরই কেবল এসব যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছিল ইসরায়েল। এবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে ইসরায়েল কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে কে আইডিএফকে (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) নতুন করে যুদ্ধ সরঞ্জামে সাজিয়ে দেবে? ইসরায়েলের নগরগুলোকে লক্ষ্য করে ইরান ও তার বন্ধুদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা থেকেই বা কে রক্ষা করবে? তা ছাড়া মার্কিনদের ওপর এ রকম বিপর্যয় চাপিয়ে দেওয়ায় তাদের মধ্যে যে ইহুদি-বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, সে ব্যাপারেই বা কে নিশ্চয়তা দিতে পারে?
এদিকে মার্কিন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপই হয়তো ইরানকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখার জন্য যথেষ্ট হবে। লিবিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি কাজে লেগেছে। এখন উত্তর কোরিয়ার বেলায় তা কাজে লাগানো হচ্ছে। পারস্যের অধিবাসীরা জাতিগতভাবেই ব্যবসায়ী। তারা হয়তো নিজেদের জন্য লাভজনক কোনো চুক্তি স্বাক্ষরে ঠিকই সক্ষম হবে।
কয়েক বছর আগেও ওয়াশিংটনের নব্য রক্ষণশীলরা ইরান দখল করাটা কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিল। এ আলোচনা থেকে ইরানিরা বুঝে গেছে, তারা মার্কিন হামলার শিকার হচ্ছে না। অপর দিকে, দুই পক্ষের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যাবে। তবে অপেক্ষাকৃত সাহসী সেনা কর্মকর্তারা হিসাব করে দেখিয়েছেন, এটা বাকি বিশ্বের জন্য তেমন কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। আমরা সহিংস কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ একটি জগতেই থাকব। শীতল যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যেমন ভারসাম্যপূর্ণ একটি অবস্থানে ছিল, ঠিক তেমন। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কটা যেমন, তেমন। খুব বন্ধুত্বপূর্ণও না, আবার খুব ভয়ংকর সহিংসও না—এমনই থাকবে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-বলয়ের সম্পর্ক।
ইতিহাস বলে, ইরান গত হাজার বছরের মধ্যে কোনো দেশকে আক্রমণ করেনি। দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ অবশ্য বন্য আবেগ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ইরানি নেতৃত্ব বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে। এদিকে ইসরায়েলও ইরানের লেজে সহজে পা দেবে না। ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী গিদিওন সা’আর যথার্থই বলেছেন, আসলে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন সমস্যা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই ইরানের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চমৎকার সাফল্যও দেখিয়েছেন। ওবামা হয়তো তাঁকে চুপি চুপি ডেকে বলে দিয়েছেন: ঠিক আছে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তুমি যত ইচ্ছা বসতি স্থাপন করো কিংবা অশান্তির খেলা খেলে যাও। কিন্তু ইরানকে তোমার গুরুজনের হাতেই ছেড়ে দাও।
(বৈরুত যুদ্ধ চলাকালে ১৯৮২ সালের ৩ জুলাই ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে দেখা করেন ইসরায়েলি সাংবাদিক ও শান্তিকর্মী ইউরি আভনেরি সারা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। আরাফাতের পক্ষ থেকেও সেটা ছিল প্রথম কোনো ইসরায়েলি সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
১৯২৩ সালে জার্মানির একটি ঐতিহ্যবাহী ধনাঢ্য ইহুদি পরিবারে এই আভনেরির জন্ম। হিটলারের উত্থানের পরপরই তাঁর বাবা ফিলিস্তিনে পাড়ি জমান। ১৯৪৭ সালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি জীবিকার তাগিদে নানা পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন, জড়িয়েছেন নানা আন্দোলনে। তিনি বারবার হামলার শিকার হয়েছেন, স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর লেখনী, নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাঁর গড়ে তোলা সংগঠন। ১৯৯৩ সালে বামপন্থী ও উদার ইহুদি এবং আরব বংশোদ্ভূত ইসরায়েলিদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘গুশ শালোম’ নামের সংগঠন। এ সংগঠন গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েলি কারাগারে আটক সব ফিলিস্তিনির মুক্তি, সব ইহুদি বসতি উচ্ছেদ ও জেরুজালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই পক্ষেরই রাজধানী হিসেবে ঘোষণার দাবি করে। আভনেরি ২০০১ সালে ‘রাইট লিভিংহুড অ্যাওয়ার্ড’ (নোবেল পুরস্কারের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত) লাভ করেন। সংবাদভিত্তিক ইসরায়েলি ওয়েবসাইট ওয়াই নেট-এর চালানো এক জরিপে ২০০৫ সালে আভনেরি সর্বকালের সেরা ১২৮ ইসরায়েলির মধ্যে অন্যতম নির্বাচিত হন।)
যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা করবে না। এ বছর তো নয়ই, আসন্ন বছরগুলোতেও নয়। নির্বাচনী বিবেচনা কিংবা সামরিক সীমাবদ্ধতার চেয়েও এই হামলা না করার পেছনে একটি গূঢ় কারণ লুকিয়ে রয়েছে। এ কারণটি হলো, যুক্তরাষ্ট্র যদি তা করে তবে সেটি হবে দেশটির নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। সেই সঙ্গে সারা বিশ্বের জন্যও তা বয়ে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয়।
নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘তুমি যদি কোনো দেশের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতি বুঝতে চাও, তবে তার মানচিত্রের দিকে নজর দাও।’ হামলার শিকার হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। এ প্রণালির মধ্য দিয়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইরাক ও ইরান থেকে বিশ্বের মোট ৪০ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়ে থাকে। প্রণালিটি বন্ধ করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে তেলের দাম দ্বিগুণ, তিন গুণ, চার গুণ বেড়ে যাবে। ফলে মার্কিন ও বিশ্ব অর্থনীতিতেও নামবে ধস।
এসব ছোটখাটো বিষয়ও জেনারেল, সেনা বিশেষজ্ঞসহ বিশ্বকে সংকীর্ণ ‘নিরাপত্তা’র ঘেরাটোপ থেকে পর্যবেক্ষণকারী বিজ্ঞ লোকজনের মনোযোগ এড়ায় না।
এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়াটা হবে ইরানে সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সহজ একটি পদক্ষেপ। কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপই এ জন্য যথেষ্ট হবে। তবে এটি পুনরায় খুলে দিতে হলে সেখানে মার্কিন নৌবাহিনীর রণতরীতে করে যুদ্ধবিমান পাঠানোই যথেষ্ট হবে না। এই জলসীমাকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আওতামুক্ত রাখতে দেশটির বিশাল অংশ দখল করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এ ক্ষেত্রে ইরানের বিশাল আকৃতির কথা বিবেচনা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এই দেশটি জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির যৌথ আকৃতির চেয়েও বিশাল। কাজেই ইরান দখল করা সহজ হবে না। ইরানে হামলা করা হলে তা হবে অত্যন্ত দীর্ঘ একটি যুদ্ধ। হয়তো বা তা ভিয়েতনাম যুদ্ধের চেয়েও দীর্ঘতর হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র যে-ই ইরানে হামলা চালাক, মুসলিম দেশটির জন্য এর অর্থ একই হবে। ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান এক ও অভিন্ন হিসেবেই বিবেচনা করে। দুই ক্ষেত্রেই হামলার পরিণতি হবে হরমুজ প্রণালি বন্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ। এসব বিবেচনা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেও যেমন ইরানে হামলা চালাবে না, দোসর ইসরায়েলকেও হামলা করা থেকে বিরত রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো রকম অবগত না করে ১৯৫৬ সালে সেই যে ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এর পরও তো ৫৬ বছর পেরিয়ে গেছে। সেই যুদ্ধে বিজয়ের সব অর্জনই নিজের ঝুলিতে পুরেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার। এরপর আর কখনোই এ ধরনের ভুল করেনি ইসরায়েল। সিক্স ডে ওয়ার ও প্রথম লেবানন যুদ্ধের আগে ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন পেতে সেখানে বিশেষ দূত পাঠায় ইসরায়েল। অনুমতি পাওয়ার পরই কেবল এসব যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়েছিল ইসরায়েল। এবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে ইসরায়েল কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে কে আইডিএফকে (ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী) নতুন করে যুদ্ধ সরঞ্জামে সাজিয়ে দেবে? ইসরায়েলের নগরগুলোকে লক্ষ্য করে ইরান ও তার বন্ধুদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা থেকেই বা কে রক্ষা করবে? তা ছাড়া মার্কিনদের ওপর এ রকম বিপর্যয় চাপিয়ে দেওয়ায় তাদের মধ্যে যে ইহুদি-বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, সে ব্যাপারেই বা কে নিশ্চয়তা দিতে পারে?
এদিকে মার্কিন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপই হয়তো ইরানকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখার জন্য যথেষ্ট হবে। লিবিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি কাজে লেগেছে। এখন উত্তর কোরিয়ার বেলায় তা কাজে লাগানো হচ্ছে। পারস্যের অধিবাসীরা জাতিগতভাবেই ব্যবসায়ী। তারা হয়তো নিজেদের জন্য লাভজনক কোনো চুক্তি স্বাক্ষরে ঠিকই সক্ষম হবে।
কয়েক বছর আগেও ওয়াশিংটনের নব্য রক্ষণশীলরা ইরান দখল করাটা কতটা সহজ হবে, তা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছিল। এ আলোচনা থেকে ইরানিরা বুঝে গেছে, তারা মার্কিন হামলার শিকার হচ্ছে না। অপর দিকে, দুই পক্ষের মধ্যে যদি কোনো চুক্তি না হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যাবে। তবে অপেক্ষাকৃত সাহসী সেনা কর্মকর্তারা হিসাব করে দেখিয়েছেন, এটা বাকি বিশ্বের জন্য তেমন কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। আমরা সহিংস কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ একটি জগতেই থাকব। শীতল যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যেমন ভারসাম্যপূর্ণ একটি অবস্থানে ছিল, ঠিক তেমন। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কটা যেমন, তেমন। খুব বন্ধুত্বপূর্ণও না, আবার খুব ভয়ংকর সহিংসও না—এমনই থাকবে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-বলয়ের সম্পর্ক।
ইতিহাস বলে, ইরান গত হাজার বছরের মধ্যে কোনো দেশকে আক্রমণ করেনি। দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ অবশ্য বন্য আবেগ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ইরানি নেতৃত্ব বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলে। এদিকে ইসরায়েলও ইরানের লেজে সহজে পা দেবে না। ইসরায়েলের শিক্ষামন্ত্রী গিদিওন সা’আর যথার্থই বলেছেন, আসলে নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন সমস্যা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই ইরানের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চমৎকার সাফল্যও দেখিয়েছেন। ওবামা হয়তো তাঁকে চুপি চুপি ডেকে বলে দিয়েছেন: ঠিক আছে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তুমি যত ইচ্ছা বসতি স্থাপন করো কিংবা অশান্তির খেলা খেলে যাও। কিন্তু ইরানকে তোমার গুরুজনের হাতেই ছেড়ে দাও।
(বৈরুত যুদ্ধ চলাকালে ১৯৮২ সালের ৩ জুলাই ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে দেখা করেন ইসরায়েলি সাংবাদিক ও শান্তিকর্মী ইউরি আভনেরি সারা বিশ্বে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। আরাফাতের পক্ষ থেকেও সেটা ছিল প্রথম কোনো ইসরায়েলি সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ।
১৯২৩ সালে জার্মানির একটি ঐতিহ্যবাহী ধনাঢ্য ইহুদি পরিবারে এই আভনেরির জন্ম। হিটলারের উত্থানের পরপরই তাঁর বাবা ফিলিস্তিনে পাড়ি জমান। ১৯৪৭ সালে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি জীবিকার তাগিদে নানা পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন, জড়িয়েছেন নানা আন্দোলনে। তিনি বারবার হামলার শিকার হয়েছেন, স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে তাঁর লেখনী, নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাঁর গড়ে তোলা সংগঠন। ১৯৯৩ সালে বামপন্থী ও উদার ইহুদি এবং আরব বংশোদ্ভূত ইসরায়েলিদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘গুশ শালোম’ নামের সংগঠন। এ সংগঠন গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েলি কারাগারে আটক সব ফিলিস্তিনির মুক্তি, সব ইহুদি বসতি উচ্ছেদ ও জেরুজালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুই পক্ষেরই রাজধানী হিসেবে ঘোষণার দাবি করে। আভনেরি ২০০১ সালে ‘রাইট লিভিংহুড অ্যাওয়ার্ড’ (নোবেল পুরস্কারের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত) লাভ করেন। সংবাদভিত্তিক ইসরায়েলি ওয়েবসাইট ওয়াই নেট-এর চালানো এক জরিপে ২০০৫ সালে আভনেরি সর্বকালের সেরা ১২৮ ইসরায়েলির মধ্যে অন্যতম নির্বাচিত হন।)