রবিবার, ৩ জুন, ২০১২

ন্যাটো : সত্যিকারের এক আগ্রাসী সামরিক জোট


॥ গোলাপ মুনীর ॥


নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন। সমধিক সুপরিচিত ন্যাটো (NATO) নামে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি রাজনৈতিক ও সামরিক জোট। এর জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ৬৩ বছর আগে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে দিকে এর ২৫তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শিকাগো শহরে। এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সময় ন্যাটোবিরোধী হাজার হাজার মানুষ সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় হাজার হাজার যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারী সম্মেলনস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে, পুলিশ তাদের মাঝ পথে থামিয়ে দেয়। কিন্তু একটি গ্রুপ পুলিশের সাথে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়। পুলিশ বলেছে, বিক্ষোভে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক অংশ নেয়। এদের নেতৃত্ব দেন আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ-ফেরত প্রবীণেরা। পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতারও করে। বিক্ষোভকারীদের কঠোরভাবে দমনের বিষয়টি বিশ্বের অনেক দেশের গণমাধ্যমে প্রবল সমালোচিত হয়। কিন্তু স্নায়ুদ্ধের সময়ে গড়ে ওঠা এই সংস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্নই থেকে যায় বিশ্ববাসীর আড়ালে। কিংবা বলা যায়, এসব প্রশ্ন হয় থেকে যায় অবহেলিত, নয়তো সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়।
কোল্ড ওয়ার অর্থোডক্সি মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও এর আরো ১১টি মিত্র দেশ ১৯৪৯ সালে ন্যাটো গড়ে তোলে ইস্টার্ন ব্লকের ওপর সোভিয়েত আগ্রাসন ও প্রভাব প্রতিহত করার জন্য। তখন বলা হলো, ন্যাটো হচ্ছে একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক জোট। যদি তাই হয়, তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেন ‘মিশন অ্যাকমপ্লিসড’ ঘোষণা দিয়ে ন্যাটো জোট ভেঙে দেয়া হলো না? ব্রাসেলসের আমলারা ন্যাটো ভেঙে না দিয়ে বরং তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে ন্যাটোকে খাপ খাওয়ানোর জন্য ন্যাটোর মিশন আরো সম্প্রসারিত করেন। তখন বলা হলো, ন্যাটোর সম্প্রসারিত মিশন হচ্ছেÑ ‘শান্তি’ ও ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করাসহ সঙ্কট মোকাবেলা। এ ধরনের অস্পষ্ট ‘মিশন স্টেটমেন্ট’ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট কার্যত বিশ্বের যেকোনো দেশে, যেকোনো স্থানে যখন ইচ্ছা হস্তক্ষেপ করার পথটিই সুগম করল। এর সূত্র ধরেই আমরা ন্যাটোর উপস্থিতি দেখছি আফগানিস্তান, কসোভো, উত্তর আফ্রিকা ও সোমালিয়ায়। তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অজুহাতে অন্য দেশে ন্যাটোর আগ্রাসনকে আরো যৌক্তিক করে তোলা হয়েছে। নয়-এগারোর সন্ত্রাসী হামলার কয়েক দিন পর ন্যাটোর সনদে অনুচ্ছেদ ৫ সংযোজন করে। এ অনুচ্ছেদে ঘোষণা দেয়া হয়, ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলাকে সব সদস্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর মাধ্যমে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগান আগ্রাসনের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়, যেখানে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ন্যাটোর উপযোগিতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছে। ২৮ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাটোর নামে আজ যা করা হচ্ছে, তা কার্যত করা হচ্ছে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই। আমেরিকান বিদেশনীতিকে এড়িয়ে কংগ্রেসকে এড়িয়ে ন্যাটোকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকান প্রেসিডেন্টরা অনেক কিছু করে যাচ্ছেন। বিল কিনটনের সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের অঘোষিত ও অবৈধ যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল ন্যাটোর ছত্রছায়ায়। একইভাবে বারাক ওবামা লিবিয়ার সরকার পতনের অভিযানে ন্যাটোকে ব্যবহার করেন। 
ন্যাটোকে ভেঙে না দেয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের প্রভাব। ন্যাটো সদস্য দেশগুলো অস্ত্র কেনা ব্যবস্থার আওতায় কোটি কোটি ডলার তাদের দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠাচ্ছে। সেজন্য অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী সময়েও ন্যাটোর সম্প্রসারণে সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৬। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর এর সদস্য সংখ্যা ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে তা ২৮-এ উন্নীত করা হয়। এ সম্প্রসারণের ফলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন নেতৃত্বাধীন ওয়ারশো জোটের সদস্য দেশগুলোও অংশ নেয়। সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র (এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়া); সাবেক দুই যুগোস্লাভ প্রজাতন্ত্র (স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া) এবং আলবেনিয়া এখন ন্যাটোর সদস্য। ন্যাটো ইউক্রেন ও জর্জিয়া নিয়েও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু রাশিয়া যখন ঘোষণা দেয়, ইউক্রেন ও জর্জিয়ার ওপর ন্যাটোর হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না, তখন সেখানে ন্যাটোর কর্মতৎপরতা থামানো হয়।
ন্যাটোর ঘোষিত মিশন হচ্ছেÑ ইউরোপে শান্তি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন। কিন্তু ১৯৯৯ সালের পর এর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ হচ্ছে চরম উত্তেজনা সৃষ্টিকর। এর ফলে রাশিয়ার সাথে এর উত্তেজনাকর বিরোধ ব্যাপক বাড়িয়ে তুলেছে। ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সীমান্তবর্তী ন্যাটো সদস্যগুলোতে সামরিক শক্তি ও বিশাল বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে রাশিয়া ২০০৭ সালে বাতিল করে দেয় ‘ট্রিটি অন কনভেনশনাল আর্মড ফোর্সেস ইন ইউরোপ’। ন্যাটোই ২০০৮ সালে জর্জিয়াকে রাশিয়ার সাথে সামরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে প্ররোচিত করে।
আসলে ন্যাটো গড়ে তোলার সময়ে ইউরোপে সে পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল, তাতে ধরেই নেয়া হয়েছিল, সেখানে জোটবদ্ধ যুদ্ধই হবে পরিণতি। ইতিহাসবিদ রাফল রাইকো লিখেছেনÑ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে রাশিয়ার প্রাধান্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। রুজভেল্ট ও চার্চিলের প্রত্যাশা অনুযায়ী জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ও এর ক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার পর এমনটিই হওয়া স্বাভাবিক ছিল। ইয়াল্টা দুই পাশ্চাত্য নেতা নীরবে পূর্ব ইউরোপের ওপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বশ্যতা স্বীকার করে নেন, যা স্ট্যালিনের বাহিনী জয় করে নেয়। তবে তাদের শঙ্কা ছিল বেড ডিক্টেটর সে এলাকায় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না। কারণ, স্ট্যালিনের কাছে কমিউনিস্টবিরোধী সরকার চরমভাবে অগ্রহণযোগ্য হবে। ১৯৪৫ সালে স্ট্যালিন ঘোষণা দেন, তার বাহিনী যত দূর সম্ভব ভূখণ্ড দখল করবে, সেখানে তার সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করা হবে।
স্নায়ুযুদ্ধ প্রবলভাবে সূত্রপাত হওয়ার সময় ক্ষমতার ভারসাম্য জোরালোভাবেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে অনুকূলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রাধান্য অভাবনীয় ও অভূতপূর্বভাবে বেড়ে যায়। অন্য দিকে রাশিয়া নাৎসি জার্মানির সাথে লড়াই করে দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে আরেকটি যুদ্ধে লড়ার মতো অবস্থা রাশিয়ার তখন ছিল না। ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্টোগোমারি ১৯৪৭ সালে রাশিয়া সফর শেষে জেনারেল আইজেন হাওয়ারের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন : “The Soviet Union is very very tired. Devastation in Russia is appaling, and the country is no fit state to go to war.’’
রুশ কূটনীতিকেরা তখন অতি আগ্রহী ছিল পাশ্চাত্যের সাথে একটি চুক্তির জন্য, যাতে করে এরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের সুযোগ পেতে পারে। জোসেফ স্ট্যালিন নিশ্চিতভাবে অত্যাচারী শাসক ছিলেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমনকি এই রক্তচোষা স্বৈরশাসক বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সত্যিকার রাজনীতির চর্চা করতেন। ইতিহাসবিদ ওয়াল্টার লফেবার তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন : ‘তবে স্ট্যালিন তার দেশের ভেতরে খুবই সক্রিয় ছিলেন। দেশের ভেতরটা ছিল তার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। ১৯৩৯-৪৬ পর্যন্ত সময়ে তিনি পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবতা তথা রিয়েলিজম প্রদর্শন করেন। সচেতনতার সাথে সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি ভ্রান্ত ছিলেন, এমন ব্যাখ্যায় যাওয়ার সুযোগ তিনি কাউকে দেননি।
স্ট্যালিন প্রত্যাশা করতেন পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাব বলয় জারি থাকুক। তার এ প্রত্যাশা ছিল যৌক্তিক। যে আগ্রাসন তার দেশকে বিধ্বস্ত করে দেয়, সে আগ্রাসন আসে বিরোধী পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকেই। তার দাবি ছিল, তুরস্ক উপকূল বরাবর সোভিয়েত জাহাজের ট্রানজিট দিতে হবে। তার মতে, এটি ছিল রাশিয়ার প্রচলিত দাবিরই পুনরুদ্ধার মাত্র। স্ট্যালিন সম্মান জানিয়েছেন গ্রিস নিয়ে চার্চিলের সাথে তার সম্পাদিত চুক্তির প্রতি। তিনি তেল-ছাড় পাওয়ার পরপর ইরান থেকে রুশ বাহিনী প্রত্যাহার করে নেন।
রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর রবার্ট টাফ্ট যুদ্ধ-উত্তর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন, ‘পশ্চিম ইউরোপে রুশ আক্রমণের কোনো হুমকি নেই। আমি সোভিয়েত মনোভাব বোঝার ক্ষমতা রাখি না। তবে চার বছর ধরে মধ্য ইউরোপের বাইরে কোনো সামরিক অগ্রযাত্রার চেষ্টা প্রদর্শন করেনি রাশিয়া। আঞ্চুরিয়া তাদেরকে ইয়াল্টা বরাদ্দ দিয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ওয়ালেস সিনেটর টাফটের বিশ্লেষণ সমর্থন করে বলেছেন, রাশিয়ার যেমন লাতিন আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কিছুই করার নেই, তেমনি পূর্ব ইউরোপের রাজনীতিতে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা পছন্দ করি বা না করি, রাশিয়া তার প্রভাব বলয়ের এলাকায় সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে দিতে চাইবে, আমরা যেমনটি চাই আমাদের প্রভাব বলয়ের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমলে নেননি সিনেটর রবার্ট টাফট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ওয়ালেসের কথা। বরং এর বদলে তিনি আমলে নেন সিনেটর আর্থার ভেন্ডেবার্গের পরামর্শ। ভেন্ডেনবার্গ তাকে বলেছিলেন : আমেরিকান জনগণ থেকে দোজখ দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। একই সময়ে কূটনীতিক ও ইতিহাসবিদ জর্জ এফ কেনান ফরেন পলিসি পত্রিকায় একটি লেখা লেখেন। এ লেখায় ট্রুম্যানের রাশিয়ার সাথে দ্বান্দ্বিক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। ‘দ্য সোর্সেস অব সোভিয়েট কন্ডাক্ট’ শীর্ষক এ লেখায় জর্জ এফ কেনান অভিমত প্রকাশ করে বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন অতিশয় গোঁড়া সম্প্রসারণবাদী (fanatically expansonist) এবং এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংযত রাখতে হবে।’
সোভিয়েতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতির মৌল উপাদান হলোÑ ধৈর্য ও সুদৃঢ়ভাবে রুশ সম্প্রসারণ প্রবণতার ব্যাপারে সচেতন থাকা, পশ্চিমা জগতের ফ্রি ইনস্টিটিউশনগুলোর ওপর রুশ চাপ সংযত করতে হবে দক্ষ প্রতিশক্তি প্রয়োগ করে। এ জন্য ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অব্যাহত পরিবর্তন আনতে হবে, সোভিয়েত নীতির পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে। ুধার্ত রুশ ভল্লুককে খাঁচায় আবদ্ধ রাখতে হবে অবশ্যই।
সত্যটি হচ্ছেÑ ১৯৪৯ সালে ন্যাটো গড়ে তোলা ছিল একটি ব্যাপকতর ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা তথা ‘ওয়াইডার জিওপলিটিক্যাল প্ল্যানের’ অংশ। আর এ পরিকল্পনা ওয়াশিংটন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার অনেক আগেই। এ পরিকল্পনা ছিল বিশ্বব্যাপী আমেরিকান রাজনৈতিক ও সামরিক সাম্রাজ্য (World-Spanning American Political and Millitary empire) গড়ে তোলা। এমনটি জানিয়েছেন ক্রিস্টোফার লেইন তার ‘দ্য পিস অব ইলিউশনস : অ্যামেরিকান গ্রান্ড স্ট্র্যাটেজি ফ্রম ১৯৪০ টু দ্য প্রেজেন্ট’ শীর্ষক লেখায়। এ লেখায় তিনি বলেন : এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা যুদ্ধ-উত্তর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মহাভিত রচনা করে চলেছিলেন, সে ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা হবে কর্তৃত্ববাদী।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে কমিউনিজমের ভীতি ছড়িয়ে দেয়া ছিল অপরিহার্য। কারণ তা না হলে আমেরিকান জনগণ তাদের দেশের বিদেশনীতির ব্যাপক পরিবর্তন মেনে নিত না কখনোই। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফস্টার ডুলিস বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে এ বোঝা বহনে সক্ষম করে তোলার জন্য আমাদেরকে একটি আবেগপ্রবণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, ঠিক যুদ্ধকালীন মনস্তত্ত্বের মতো। কারণ ছাড়াই আমাদেরকে হুমকির ভয় ছড়িয়ে দিতে হবে।’ আর এভাবে সোভিয়েত লাল বাহিনী আর স্নায়ুযুদ্ধের ভীতিটা তখন ছড়িয়ে দেয়া হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমনটি করা হয়েছিল নিছক আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাক্সা থেকে। ওই উচ্চাকাক্সা আরো জোরালো করে তোলা হয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল মেমোরেন্ডাম নম্বর ৬৮-এর মাধ্যমে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিলিটারি সুপ্রিমেসি’ সোভিয়েত ইউনিয়ন না থাকা অবস্থায়ও জারি রাখা হবে।
স্মরণযোগ্য, যুদ্ধ হচ্ছে ন্যাটোর একটি নিজস্ব স্থায়ী শিল্প। শত শত কোটি ডলার ব্যয় করা হচ্ছে অস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধসরঞ্জাম তৈরির পেছনে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন রূপ নিয়েছে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে। 
চল্লিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধাকেরা ভুল করে ধরে নিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী সমৃদ্ধির জন্য একটি স্থায়ী যুদ্ধাবস্থা বজায় রাখা দরকার। ১৯৫০ সাল-উত্তর সময়ে উল্লিখিত ৬৮ নম্বর মেমোরেন্ডাম বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। ব্যাপক সামরিক ব্যয় এখন মার্কিন অর্থনীতির এক নিয়মিত বৈশিষ্ট্যসূচক বিষয়। এর ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন অর্থনীতিতে ঋণের বোঝা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিপক্ষ শক্তি নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসে সাহসী হয়ে উঠেছে। আর এ ক্ষেত্রে ন্যাটোকে ব্যবহার করা হচ্ছে শতভাগ। তাই বলা হচ্ছে : ‘ন্যাটো ট্রুলি ইজ অ্যান অ্যাগ্রেসিভ গ্লোবাল মিলিটারি অ্যালায়েন্স।’ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন