আরব গণজাগরণে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি নীরব বসন্ত বা গণআন্দোলন
গড়ে উঠছে। আরব বসন্তের ফলে ইতোমধ্যেই মিসর, তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায
স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে এবং আরো কয়েকটি দেশে আন্দোলন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই
নীরব বসন্ত এমন একসময় শুরু হয়েছে যখন দেশটির অর্থনীতি ক্রমশ বিপর্যয়ের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং জনমনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাখায় ভর করে এবং মিসরীয় বিপ্লব ও আরব বসন্তের মতো করেই ছোট আকারে কিন্তু চোখে পড়ার মত করে গ্রাউন্ড জিরোর সন্নিকটে এই নেটওয়ার্কে গড়া আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানীতে জনগণের এ আন্দোলন গড়ে উঠছে। ম্যানহাটনে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট এবং মার্কিন ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অফিসসমূহ। গত তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা ওয়াল স্ট্রিটের কাদের একটি পার্কে অবস্থান করছে।
১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী নামে তাদের এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। ম্যানহাটনের কাছে তাঁবু গেড়ে বসা এই প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভ মূলত অসাধু ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে বলে মনে হয়। ম্যানহাটনেই রয়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান অফিস। অসাধু ব্যাংকারদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে এবং এজন্য সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হাজার হাজার মানুষ বেকার ও গৃহহীন হয়ে পড়ছে। এসব কিছুর জন্য দায়ী অসাধু ব্যাংকারদের কারসাজি বলে মনে করে বিক্ষোভকারীরা।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, আমেরিকা তার পথ হারিয়েছে আমি সত্যিকার গণতন্ত্র দেখতে পাচ্ছি না। আমি জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। এখানে আছে শুধু পুরানো ব্যাধি পুঁজিবাদ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। ১৩৫টি দেশে ৭শ’ সামরিক ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি যুদ্ধপ্রিয় একটি রাষ্ট্র যা সারাবিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকদের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সজ্জিত করার জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার প্রদান করে থাকে। এ ব্যাপারে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
ম্যানহাটনের রাস্তায় নেমে যারা বিক্ষোভ করছে তারা বলছে, তারা তাহরির স্কোয়ারের গণজাগরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে গণজাগরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আরব বসন্তের মতো এখানে একটি বসন্ত সৃষ্টি করতে চান।
এদিকে রেডিও তেহরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াল স্ট্রিটে বিক্ষোভকারীরা বলেছে, তাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্পোরেট আগ্রাসন ও সামাজিক বৈষম্য বন্ধের দাবিতে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ বা ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল কর’ গ্রুপের আহবানে এ আন্দোলন চলছে। ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু করে মেইনের পোর্টল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার পার্কগুলোতে তাঁবু গেড়েছেন।
নানা গোষ্ঠী এরই মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে সাংগঠনিক বৈঠক করেছে এবং ওয়েব সাইটগুলোতে স্ট্রিমিং ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করে এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।
ম্যানহাটনে গত রোববারের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পরণে করপোরেট দানবের মতো পোশাক পরিহিত ছিল এবং মুখে শাদা রঙ মাখানো ছিল। এ ছাড়া তাদের হাতে ছিল নকল ডলার। তারা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেছে। শিকাগোর বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভকারীরা ড্রাম বাজিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
বোস্টন, সেইন্ট লুইস, ক্যানসাস সিটি, মিসরি এবং লস অ্যাঞ্জলেসসহ অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা ও চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা এ আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছে। এছাড়া সপ্তাহান্তে ব্রুকলিন ব্রিজে সাতশ’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করার ঘটনা এ আন্দোলনকে আরো উস্কে দিয়েছে।
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ নিজেদেরকে টি পার্টি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করছে। তবে অনেক বিক্ষোভকারী নিজেদেরকে আরব বসন্ত বা আরব বিশ্বের চলমান স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত বলে দাবি করছেন।
সেইন্ট লুইসের বিক্ষোভকারীদের অন্যতম এবং পেশায় কম্পিউটার সিস্টেম এনালিস্ট জ্যাসন কাউন্টস বলেন, আন্দোলনকারীরা বুঝতে পেরেছেন যে ওয়াশিংটনের ক্ষমতার পেছনে কল-কাঠি নাড়ছে ওয়াল স্ট্রিট। এর বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণের প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে জানান তিনি।
’অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ বা ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল কর’ বিক্ষোভের সূচনা হয় গত মাসের ১৭ তারিখে। সে সময় স্বল্প সংখ্যক বিক্ষোভকারী নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে তাঁবু গেড়ে অবস্থান ধর্মঘটের চেষ্টা করেছিল। অবশ্য তারপর থেকে এ আন্দোলন আরো দানা বেধে উঠতে থাকে। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে একটি পার্কে শত শত বিক্ষোভকারী তাঁবু গাড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকারীদের চিকিৎসা ও আইনগত সেবার ব্যবস্থা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘অকুপাইড ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ নামে একটি দৈনিক প্রকাশ করতে থাকে।
গত মাসের ২৪ তারিখে প্রায় একশ’ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পানি কামান ছোঁড়া হয়। ব্রুকলিন ব্রিজে বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করার সময় গত শনিবারে সাতশ’ বিক্ষোভাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ ও রাস্তা অবরোধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, পুলিশ রোববারও পাঁচজনকে আটক করেছে। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
বড়-সড় বিক্ষোভ মোকাবেলার জন্য এফবিআই ও নিউ ইয়র্ক পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের পুলিশের মুখপাত্র টিম ফ্যানলি। তবে গত গ্রীষ্মে ব্রিটেনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ যে রকম সহিংস হয়ে উঠেছিল নিউ ইয়র্কে তেমনটা ঘটবে বলে মনে করছেন না ফ্যানলি। তাই বলে নজরদারি ঢিলে করা হয়নি এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এফবিআই।
অবশ্য বিক্ষোভাকারীদের প্রতি পুলিশের নিষ্ঠুরতা এরই মধ্যে অনেক আন্দোলনকারীকে হতবাক করে দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডের উইলজাগো কুক প্রথম দিন থেকেই নিউ ইয়র্কের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ যে নিষ্ঠুর আচরণ করবে তা একবারও আন্দোলনকারীদের মনে আসেনি। কিন্তু এ ধরনের আচরণ তাদের চোখ খুলে দিয়েছে এবং আন্দোলনের স্বার্থে যতদিন প্রয়োজন ততদিন নিউ ইয়র্কে থাকবেন বলে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন তিনি।
ব্রুকলিন ব্রিজ থেকে আটক বিক্ষোভকারীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নিউইয়র্কের পুলিশ সেখানকার সিটি বাস চালকদের বাধ্য করেছে। বাস চালকরা পুলিশের এ জবরদস্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জন স্যামুলসেন বলেছেন, তারা আন্দোলনকারীদের সমর্থন করছেন এবং তারাও মনে করেন মার্কিন ধনীরা জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। বাস চালকদের জোর-জবরদস্তি করে বা হুমকির মুখে বন্দিদের নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে তা মোটেও ঠিক করা হয়নি। মার্কিন সরকারের ওপর দেশটির করপোরেটগুলোর বেআইনি প্রভাবের অবসান ঘটনোর দাবিতে কেবল নিউ ইয়র্ক নয়, অন্যান্য স্থানেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। অ্যাপোলিনা চিল্ডস নামের এক বিক্ষোভাকারী বলেছেন, ডলার কথা বলে, ডলারই শক্তির একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছে মার্কিন সমাজে। কিন্তু মার্কিন জনগণ আর ছিন্নমুল মানুষ দেখতে চায়না, চায়না কোনো বুড়ো বা অবসর প্রাপ্ত মানুষ জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে উঠুক; জনগণ এখন তাদের ন্যায্য অধিকার চাচ্ছে; জনগণ ভোট দেয় ট্যাক্স দেয় কিন্তু এবার ধনীদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হোক।
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন : কলাম লেখক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাখায় ভর করে এবং মিসরীয় বিপ্লব ও আরব বসন্তের মতো করেই ছোট আকারে কিন্তু চোখে পড়ার মত করে গ্রাউন্ড জিরোর সন্নিকটে এই নেটওয়ার্কে গড়া আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানীতে জনগণের এ আন্দোলন গড়ে উঠছে। ম্যানহাটনে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট এবং মার্কিন ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অফিসসমূহ। গত তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা ওয়াল স্ট্রিটের কাদের একটি পার্কে অবস্থান করছে।
১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী নামে তাদের এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। ম্যানহাটনের কাছে তাঁবু গেড়ে বসা এই প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভ মূলত অসাধু ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে বলে মনে হয়। ম্যানহাটনেই রয়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান অফিস। অসাধু ব্যাংকারদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে এবং এজন্য সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। এই অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হাজার হাজার মানুষ বেকার ও গৃহহীন হয়ে পড়ছে। এসব কিছুর জন্য দায়ী অসাধু ব্যাংকারদের কারসাজি বলে মনে করে বিক্ষোভকারীরা।
একজন বিক্ষোভকারী বলেন, আমেরিকা তার পথ হারিয়েছে আমি সত্যিকার গণতন্ত্র দেখতে পাচ্ছি না। আমি জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। এখানে আছে শুধু পুরানো ব্যাধি পুঁজিবাদ এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। ১৩৫টি দেশে ৭শ’ সামরিক ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি যুদ্ধপ্রিয় একটি রাষ্ট্র যা সারাবিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকদের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সজ্জিত করার জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার প্রদান করে থাকে। এ ব্যাপারে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাদের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই।
ম্যানহাটনের রাস্তায় নেমে যারা বিক্ষোভ করছে তারা বলছে, তারা তাহরির স্কোয়ারের গণজাগরণের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে গণজাগরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আরব বসন্তের মতো এখানে একটি বসন্ত সৃষ্টি করতে চান।
এদিকে রেডিও তেহরান জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াল স্ট্রিটে বিক্ষোভকারীরা বলেছে, তাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, কর্পোরেট আগ্রাসন ও সামাজিক বৈষম্য বন্ধের দাবিতে ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ বা ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল কর’ গ্রুপের আহবানে এ আন্দোলন চলছে। ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু করে মেইনের পোর্টল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার পার্কগুলোতে তাঁবু গেড়েছেন।
নানা গোষ্ঠী এরই মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে সাংগঠনিক বৈঠক করেছে এবং ওয়েব সাইটগুলোতে স্ট্রিমিং ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করে এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।
ম্যানহাটনে গত রোববারের বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের পরণে করপোরেট দানবের মতো পোশাক পরিহিত ছিল এবং মুখে শাদা রঙ মাখানো ছিল। এ ছাড়া তাদের হাতে ছিল নকল ডলার। তারা নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেছে। শিকাগোর বাণিজ্যিক এলাকায় বিক্ষোভকারীরা ড্রাম বাজিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
বোস্টন, সেইন্ট লুইস, ক্যানসাস সিটি, মিসরি এবং লস অ্যাঞ্জলেসসহ অন্যান্য স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়ে অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্দা ও চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা এ আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছে। এছাড়া সপ্তাহান্তে ব্রুকলিন ব্রিজে সাতশ’ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করার ঘটনা এ আন্দোলনকে আরো উস্কে দিয়েছে।
আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ নিজেদেরকে টি পার্টি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করছে। তবে অনেক বিক্ষোভকারী নিজেদেরকে আরব বসন্ত বা আরব বিশ্বের চলমান স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত বলে দাবি করছেন।
সেইন্ট লুইসের বিক্ষোভকারীদের অন্যতম এবং পেশায় কম্পিউটার সিস্টেম এনালিস্ট জ্যাসন কাউন্টস বলেন, আন্দোলনকারীরা বুঝতে পেরেছেন যে ওয়াশিংটনের ক্ষমতার পেছনে কল-কাঠি নাড়ছে ওয়াল স্ট্রিট। এর বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণের প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে জানান তিনি।
’অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ বা ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল কর’ বিক্ষোভের সূচনা হয় গত মাসের ১৭ তারিখে। সে সময় স্বল্প সংখ্যক বিক্ষোভকারী নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে তাঁবু গেড়ে অবস্থান ধর্মঘটের চেষ্টা করেছিল। অবশ্য তারপর থেকে এ আন্দোলন আরো দানা বেধে উঠতে থাকে। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে একটি পার্কে শত শত বিক্ষোভকারী তাঁবু গাড়েন। অবস্থান ধর্মঘটকারীদের চিকিৎসা ও আইনগত সেবার ব্যবস্থা করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ‘অকুপাইড ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ নামে একটি দৈনিক প্রকাশ করতে থাকে।
গত মাসের ২৪ তারিখে প্রায় একশ’ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পানি কামান ছোঁড়া হয়। ব্রুকলিন ব্রিজে বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করার সময় গত শনিবারে সাতশ’ বিক্ষোভাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গ ও রাস্তা অবরোধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, পুলিশ রোববারও পাঁচজনকে আটক করেছে। অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আনা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
বড়-সড় বিক্ষোভ মোকাবেলার জন্য এফবিআই ও নিউ ইয়র্ক পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের পুলিশের মুখপাত্র টিম ফ্যানলি। তবে গত গ্রীষ্মে ব্রিটেনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভ যে রকম সহিংস হয়ে উঠেছিল নিউ ইয়র্কে তেমনটা ঘটবে বলে মনে করছেন না ফ্যানলি। তাই বলে নজরদারি ঢিলে করা হয়নি এবং পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এফবিআই।
অবশ্য বিক্ষোভাকারীদের প্রতি পুলিশের নিষ্ঠুরতা এরই মধ্যে অনেক আন্দোলনকারীকে হতবাক করে দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডের উইলজাগো কুক প্রথম দিন থেকেই নিউ ইয়র্কের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ যে নিষ্ঠুর আচরণ করবে তা একবারও আন্দোলনকারীদের মনে আসেনি। কিন্তু এ ধরনের আচরণ তাদের চোখ খুলে দিয়েছে এবং আন্দোলনের স্বার্থে যতদিন প্রয়োজন ততদিন নিউ ইয়র্কে থাকবেন বলে দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন তিনি।
ব্রুকলিন ব্রিজ থেকে আটক বিক্ষোভকারীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নিউইয়র্কের পুলিশ সেখানকার সিটি বাস চালকদের বাধ্য করেছে। বাস চালকরা পুলিশের এ জবরদস্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জন স্যামুলসেন বলেছেন, তারা আন্দোলনকারীদের সমর্থন করছেন এবং তারাও মনে করেন মার্কিন ধনীরা জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। বাস চালকদের জোর-জবরদস্তি করে বা হুমকির মুখে বন্দিদের নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে তা মোটেও ঠিক করা হয়নি। মার্কিন সরকারের ওপর দেশটির করপোরেটগুলোর বেআইনি প্রভাবের অবসান ঘটনোর দাবিতে কেবল নিউ ইয়র্ক নয়, অন্যান্য স্থানেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। অ্যাপোলিনা চিল্ডস নামের এক বিক্ষোভাকারী বলেছেন, ডলার কথা বলে, ডলারই শক্তির একমাত্র উৎস হয়ে উঠেছে মার্কিন সমাজে। কিন্তু মার্কিন জনগণ আর ছিন্নমুল মানুষ দেখতে চায়না, চায়না কোনো বুড়ো বা অবসর প্রাপ্ত মানুষ জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে উঠুক; জনগণ এখন তাদের ন্যায্য অধিকার চাচ্ছে; জনগণ ভোট দেয় ট্যাক্স দেয় কিন্তু এবার ধনীদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হোক।
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন : কলাম লেখক।