শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ নামের তৃণমূল আন্দোলনে খোদ যুক্তরাষ্ট্র এখন উত্তাল




মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ‘আরব বসন্তে’ যুক্তরাষ্ট্র বেজায় খুশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই এই গণজাগরণে উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিহাস, ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ নামের তৃণমূল আন্দোলনে খোদ যুক্তরাষ্ট্র এখন উত্তাল। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, এ আর কিছুই নয়, আরব বসন্তের ছায়া পড়েছে মার্কিন মুলুকে! মার্কিন করপোরেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গত ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ম্যানহাটানের ওয়াল স্ট্রিটে এ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা বলছেন, ‘আমরাই ৯৯ শতাংশ। আর বাকি এক শতাংশ মার্কিন ধনীই অবাধে পকেট ভারী করছে। নিয়ন্ত্রণ করেছে ৩৮ শতাংশ সম্পদ। অথচ দেশটিতে বিরাজ করছে চরম বেকারত্ব। লাখ লাখ পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছে। অর্থনৈতিক সংকটের ফলে দেশটির প্রায় সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মুনাফা কামিয়ে চলছে লোভী করপোরেট ব্যবসায়ীরা।’
দিন যতই গড়াচ্ছে, ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলন ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি শহরে। আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ওয়াল স্ট্রিটের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্র পরিচালক মাইক মুরও।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ৯৯ শতাংশ জনগণের ভবিষ্যত্ রক্ষা করতেই তাঁরা ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। কেউ কেউ ওয়াল স্ট্রিটকে তুলনা করছেন মিসরের তাহরির স্কয়ারের সঙ্গে। করপোরেটবিরোধী এ আন্দোলন কেবল রাজপথেই সীমাবদ্ধ নয়। আরব বসন্তের নায়কদের মতো মার্কিন তরুণেরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ‘একসঙ্গে দখল করো’ নামে ইন্টারনেটে গড়ে উঠেছে আন্দোলন। 
‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলনের মাধ্যমে মার্কিন তরুণেরা করপোরেট ব্যবসায়ীদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। শিকাগো থেকে ডালাস, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে মায়ামি সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, পরিস্থিতি দিন দিন ওবামার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ স্বীকার করেছেন, তাঁরা আরব বসন্ত থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট চার্লস এম ব্ল ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলনকে আরব বসন্তের আদলে ‘আমেরিকান বসন্ত’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে আরব বসন্তের সঙ্গে ‘ওয়াল স্ট্রিট দখল করো’ আন্দোলনের মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন এ আন্দোলন নেতৃত্বহীন ও সুস্পষ্ট দাবি-দাওয়াবিহীন। তিউনেসিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো এ আন্দোলন রাজনৈতিক নয়। এ আন্দোলনের হাজার হাজার কর্মীর লক্ষ্য সরকারের পতন নয়। বরং বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সংকট ও সমাজে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলা বৈষম্যের বিরুদ্ধেই তাঁদের এ প্রতিবাদ। স্বৈরশাসনে পিষ্ট আরব জনগণের মতো তাঁরা স্বাধীনতা চান না। তাঁরা চান সুশাসন, অর্থনৈতিক সাম্য ও সামাজিক নিরাপত্তা। মার্কিনবিরোধীরা এ আন্দোলনকে সরাসরি গণজাগরণ বলেছেন। ইরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন নিজেই আরব বসন্তের মার্কিন সংস্করণ ‘আমেরিকান বসন্ত’ দেখছে। সমালোচকদের মতে, আরব তরুণদের মতো মার্কিন তরুণেরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন। মার্কিন সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্রই আরব বসন্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এখন সেই বসন্তের সুবাতাস যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়েই বয়ে চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন