শনিবার, ১৯ মে, ২০১২

গণতন্ত্র কি ইউরোপীয় সংকটের অংশ


 ফরিদ জাকারিয়া 

ইউরোপ জুড়ে আজকে যা ঘটছে, তাকে সবাই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিক্ষোভ হিসেবেই দেখছেন।
ইউরো অঞ্চলে অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার প্রেক্ষাপটে সংকট মোকাবিলায় অঞ্চলটিতে কৃচ্ছ্রতা নীতি বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। কৃচ্ছ্রতা নীতিতে বলা হয়েছে, বিশাল বাজেট ঘাটতির সরকারগুলোকে অবশ্যই ব্যয় হ্রাস করে ঘাটতি কমাতে হবে। এ সংকট থেকে মুক্তির জন্য ঋণদাতারাও ব্যয় সংকোচনের তাগিদ দিচ্ছে। বাজেট ঘাটতি সুষ্ঠু পর্যায়ে নিয়ে আসতে না পারলে দেশগুলো ঋণ লাভেও ব্যর্থ হবে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে তাদেরকে উচ্চ হার সুদের বোঝাও বইতে হবে।
সমস্যা হচ্ছে, অর্থনীতির এই শোচনীয় অবস্থায় সরকারগুলো যদি ব্যয় কমিয়ে আনে তাহলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে আরও নিম্নমুখী। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে সব সরকারি শ্রমিক ছাঁটাই হুমকিতে রয়েছেন তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাঁরা খুব কম পরিমাণই পণ্যসামগ্রী ও সেবা ক্রয় করতে পারবেন। এতে করে তাঁদের কর প্রদানের ক্ষমতাও হ্রাস পাবে। আর এর পরিণতিতে অর্থনীতি আরও বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হবে।
এ ক্ষেত্রে পল ক্রুগম্যানের মতো অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ হচ্ছে, কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচিকে পরিহার করা। ব্যয় বৃদ্ধি ও বাজেটকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা। আর এভাবেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও একে পুনরুজ্জীবিত করা। তবে এক্ষেত্রে সমস্যা যে, ইউরোপীয় সুশীলজনেরা বিশেষ করে ভুল অর্থনৈতিক তত্ত্বকে আঁঁকড়ে আছেন।
আমরা চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকের ইউরোপের কথা যদি চিন্তা করি, তা হলে আমি মনে করি না যে, ইউরোপের সুশীল সমাজ, বিশেষ করে জার্মানির সুশীল সমাজ সত্যিকার অর্থেই অর্থনীতিতে বিকল্প কোনো ধারণা গ্রহণ করেছে। বরং অধিকাংশই অর্থনীতির আরও নিম্নমুখী প্রবণতার মুখে ব্যয় হ্রাসকেই বেছে নিয়েছে।
এখন দেখা যাক কি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে?  তাঁরা এটা বিশ্বাস করে না যে, যদি একবার অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে কোনো সরকারকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। তারা মনে করে যে, সংকটকবলিত এরকম অনেক দেশেরই অর্থনীতি মোটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়। বরং নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা ও কর কাঠামো এবং সরকারের অদক্ষতার কারণে সেখানে অর্থনীতি চলছে বেজায় খুঁড়িয়ে।
অর্থনীতির এই সংকট অঞ্চল জুড়ে একটি ব্যাপক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এদিকে বাজার এই আভাসই দেয় যে, যদি সরকারগুলো অর্থনীতিকে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কোনোরকম উদ্যোগ না নেয়, সে ক্ষেত্রে ঋণদাতারাও সরকারগুলোকে কোনোরকম আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে না। সুতরাং সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটি এক সুবর্ণ সুযোগ।
বেশকিছু জার্মান নাগরিক ও উত্তর ইউরোপীয় দেশের জনগণের সঙ্গে কথা বলে আমার এটাই মনে হয়েছে যে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখনই কিছু কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যয় করার সময়। পরবর্তী সময়ে এ খরচ কমিয়ে আনা যাবে। কিন্তু ইউরোপের অনেকেই, বিশেষ করে জার্মানিরা মরে করেন যে, পরের সেই সময়টি আসলে কখনই আসবে না।
বাস্তবিকপক্ষেই সরকার-গুলোর খুব খারাপ সময় যাচ্ছে এখন। অবশ্য পরে তারা ভালো সময় পাবে। সত্যি কথা বলতে কি, ইউরো অঞ্চলে চলমান সংকটকে ঘিরে যে মতানৈক্য, তা অর্থনীতি বিষয়ে নয়, এ মতানৈক্য মূলত রাজনৈতিক।
এটি দুঃখজনক ব্যাপার যে, অনেক লোকই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু এর মূলে কি? গণতন্ত্র কি এ অর্থনৈতিক সংকটের অংশে পরিণত হয়েছে? এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে? মোদ্দা কথা, পশ্চিমা বিশ্বে গত চার দশক জুড়েই ভোটারদেরকে আরও সুযোগ-সুবিধা, পেনশন সুবিধা ও স্বাস্থ্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন জনপ্রতিনিধিরা। এখন প্রশ্ন, তাঁরা কি এরকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হতে পারতেন?
তা হলে সেটা কি যা অনেক ইউরোপীয়কেই কৃচ্ছ্রতা নীতি পরিত্যাগ করতে এবং আরও এক দফা ব্যয়ের জন্য উদ্দীপ্ত  করতে পারে। আমি মনে করি ইউরো অঞ্চল জুড়ে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এই যে উদ্বেগ, এমনকি এতে অনেক মার্কিনীরাও একতা হতে পারে বৈকি।
অনুবাদ: সুমাইয়া শারমিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন