আরিফ মো. তারিক হাবিব
নিউইয়র্কে সদ্যসমাপ্ত পরমাণু পর্যালোচনা সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। কারও কারও মতে, ইসরায়েলের বড় ধরনের পরাজয় হয়েছে। অন্যদিকে ইরানের হয়েছে বড় বিজয়।
পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও হাসিল হয়েছে এ দিক থেকে যে সম্মেলনে একধরনের মতৈক্য হয়েছে, যা গতবার সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তিটি (এনপিটি) জোরদার করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে কয়েকটি দেশ চাইলেও তেমন চূড়ান্ত রকম জোরদার হয়নি।
এর বদলে যা হয়েছে তা হলো, সরকারগুলো একটি লক্ষ্য স্থির করে তার পেছনে সমবেত হয়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগেই প্রথম এ আওয়াজ তোলা হলেও, এত দিন তাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েল খুবই বিরক্তের সঙ্গে দেখল, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১২ সালে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করেনি। মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ায় ইসরায়েলের জন্য এটি বিব্রতকর। এ ছাড়া এনপিটি সই না করা এবং নিজের পরমাণু কর্মসূচি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া দেশ বলেও উল্লেখ করা হয় ইসরায়েলকে। এভাবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করাকে একটি কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখা হয়।
সম্মেলনের এ দিকটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বারাক ওবামা প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলবে। সম্প্রতি এ সম্পর্কে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে কয়েকবারই এবং তা আরও খারাপের দিকেই হয়তো যাবে। ইসরায়েল ইতিমধ্যেই এই চুক্তিকে ‘ভণ্ডামি’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
পরে ওবামা একটি বিবৃতি দেন, যাতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একা চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। তবে ওবামা তাঁর হাতে ভেটো ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ করেননি।
মধ্যপ্রাচ্যকে পরমাণুমুক্ত রাখার বিষয়ে সম্মেলনটি হবে কি না, তা বিতর্কের বিষয়। এর জন্য এখনই শর্ত দেওয়া হচ্ছে। এতে কাজের কাজ কিছু হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের মতও তাই।
মিসরের ‘দক্ষ’ নেতৃত্বে আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে সক্ষম হয়। ওয়াশিংটন সম্মেলনটিকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার দোষ ঘাড়ে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার হ্রাস করা ও মার্কিন নীতি পর্যালোচনার জন্য যে প্রচেষ্টা এক বছর ধরে ওবামা চালিয়েছেন, তার সবই মাটি হতো তা করলে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএইএ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ উভয়ের নির্দেশ না মানার পরও ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেসব দেশ আন্তর্জাতিক নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিষয়ে গোটা দু-এক উল্লেখ এতে আছে। এ রকম দেশ যেহেতু শুধু ইরানই, সেহেতু তার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু এতে সরাসরি ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বলা হচ্ছে, নাম উল্লেখ করা হলে ইরান চুক্তিটি ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেই প্রস্তুতি ছিল না।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মার্ক ফিটজপ্যাট্রিক এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছু একটা ফল যে পাওয়া গেছে, সেটা একটা ভালো দিক। এনপিটি ঝুলে পড়েছিল। এর যে গুরুত্ব সে ব্যাপারে আবার মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেহাল অবস্থায় পড়া এনপিটিতে কিছুটা নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে এ সম্মেলন।
তবে আইইএসএসের বিশেষজ্ঞের মত হচ্ছে, এ থেকে সামনের দিকে অগ্রগতি তেমন কিছু হয়নি। এনপিটিকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কেবল, জোরদার করা হয়নি মোটেই। সে কারণে এ সম্মেলনকে অপচয়িত সুযোগ বলাই বেশি সংগত।
ফিটজপ্যাট্রিকের মতে, সুযোগের অপচয়ের একটি উদাহরণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এনপিটি চুক্তি ত্যাগ করা দেশগুলোর ওপর শাস্তি হিসেবে অবরোধ আরোপের প্রস্তাব দিলেও তা গৃহীত হয়নি। তিন মাসের নোটিশ দিয়ে কোনো দেশ এনপিটি ত্যাগ করতে পারে, উত্তর কোরিয়া যেমনটি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা না হলেও এ কথা বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। দক্ষিণ কোরিয়া এতে খুশি হবে।
আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের পরমাণু চুল্লির ওপর আরও জোরদার তত্ত্বাবধান-কার্যক্রম চালু হওয়ার আশু সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র এটা চেয়েছিল। এ ব্যাপারটিতে অগ্রগতি না হলে পরবর্তী দফায় নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে তাদের অস্ত্র ধ্বংস করার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা এমনকি লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারেও মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। কয়েকটি জোটনিরপেক্ষ দেশ চেয়েছিল এ লক্ষ্যমাত্রাটি হোক ২০২৫ সালের পর কোনো একসময়। সম্মেলনের দলিলপত্রে কোনো তারিখ নেই। এতে কেবল অগ্রগতির জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক বছরে কিছু অগ্রগতি হয়েছেও। পরমাণু বিষয়ে নতুন রুশ-মার্কিন চুক্তি এর এক বড় উদাহরণ।
এনপিটি পর্যালোচনার পরবর্তী সম্মেলন ২০১৫ সালে।
পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও হাসিল হয়েছে এ দিক থেকে যে সম্মেলনে একধরনের মতৈক্য হয়েছে, যা গতবার সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুক্তিটি (এনপিটি) জোরদার করার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে কয়েকটি দেশ চাইলেও তেমন চূড়ান্ত রকম জোরদার হয়নি।
এর বদলে যা হয়েছে তা হলো, সরকারগুলো একটি লক্ষ্য স্থির করে তার পেছনে সমবেত হয়েছে। আজ থেকে ১৫ বছর আগেই প্রথম এ আওয়াজ তোলা হলেও, এত দিন তাকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েল খুবই বিরক্তের সঙ্গে দেখল, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত মধ্যপ্রাচ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১২ সালে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি করেনি। মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হওয়ায় ইসরায়েলের জন্য এটি বিব্রতকর। এ ছাড়া এনপিটি সই না করা এবং নিজের পরমাণু কর্মসূচি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পর্যবেক্ষণের সুযোগ না দেওয়া দেশ বলেও উল্লেখ করা হয় ইসরায়েলকে। এভাবে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করাকে একটি কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখা হয়।
সম্মেলনের এ দিকটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বারাক ওবামা প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলবে। সম্প্রতি এ সম্পর্কে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে কয়েকবারই এবং তা আরও খারাপের দিকেই হয়তো যাবে। ইসরায়েল ইতিমধ্যেই এই চুক্তিকে ‘ভণ্ডামি’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
পরে ওবামা একটি বিবৃতি দেন, যাতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একা চিহ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। তবে ওবামা তাঁর হাতে ভেটো ক্ষমতা থাকলেও তা প্রয়োগ করেননি।
মধ্যপ্রাচ্যকে পরমাণুমুক্ত রাখার বিষয়ে সম্মেলনটি হবে কি না, তা বিতর্কের বিষয়। এর জন্য এখনই শর্ত দেওয়া হচ্ছে। এতে কাজের কাজ কিছু হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ইসরায়েল পূর্ণাঙ্গ শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রের মতও তাই।
মিসরের ‘দক্ষ’ নেতৃত্বে আরব দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে সক্ষম হয়। ওয়াশিংটন সম্মেলনটিকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করার দোষ ঘাড়ে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার হ্রাস করা ও মার্কিন নীতি পর্যালোচনার জন্য যে প্রচেষ্টা এক বছর ধরে ওবামা চালিয়েছেন, তার সবই মাটি হতো তা করলে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএইএ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ উভয়ের নির্দেশ না মানার পরও ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেসব দেশ আন্তর্জাতিক নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিষয়ে গোটা দু-এক উল্লেখ এতে আছে। এ রকম দেশ যেহেতু শুধু ইরানই, সেহেতু তার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু এতে সরাসরি ইরানের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বলা হচ্ছে, নাম উল্লেখ করা হলে ইরান চুক্তিটি ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেই প্রস্তুতি ছিল না।
লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মার্ক ফিটজপ্যাট্রিক এ প্রসঙ্গে বলেন, কিছু একটা ফল যে পাওয়া গেছে, সেটা একটা ভালো দিক। এনপিটি ঝুলে পড়েছিল। এর যে গুরুত্ব সে ব্যাপারে আবার মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেহাল অবস্থায় পড়া এনপিটিতে কিছুটা নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে এ সম্মেলন।
তবে আইইএসএসের বিশেষজ্ঞের মত হচ্ছে, এ থেকে সামনের দিকে অগ্রগতি তেমন কিছু হয়নি। এনপিটিকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে কেবল, জোরদার করা হয়নি মোটেই। সে কারণে এ সম্মেলনকে অপচয়িত সুযোগ বলাই বেশি সংগত।
ফিটজপ্যাট্রিকের মতে, সুযোগের অপচয়ের একটি উদাহরণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এনপিটি চুক্তি ত্যাগ করা দেশগুলোর ওপর শাস্তি হিসেবে অবরোধ আরোপের প্রস্তাব দিলেও তা গৃহীত হয়নি। তিন মাসের নোটিশ দিয়ে কোনো দেশ এনপিটি ত্যাগ করতে পারে, উত্তর কোরিয়া যেমনটি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা না হলেও এ কথা বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না। দক্ষিণ কোরিয়া এতে খুশি হবে।
আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের পরমাণু চুল্লির ওপর আরও জোরদার তত্ত্বাবধান-কার্যক্রম চালু হওয়ার আশু সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র এটা চেয়েছিল। এ ব্যাপারটিতে অগ্রগতি না হলে পরবর্তী দফায় নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে ইতিমধ্যেই পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো আলোচনার মাধ্যমে তাদের অস্ত্র ধ্বংস করার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা এমনকি লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারেও মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। কয়েকটি জোটনিরপেক্ষ দেশ চেয়েছিল এ লক্ষ্যমাত্রাটি হোক ২০২৫ সালের পর কোনো একসময়। সম্মেলনের দলিলপত্রে কোনো তারিখ নেই। এতে কেবল অগ্রগতির জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক বছরে কিছু অগ্রগতি হয়েছেও। পরমাণু বিষয়ে নতুন রুশ-মার্কিন চুক্তি এর এক বড় উদাহরণ।
এনপিটি পর্যালোচনার পরবর্তী সম্মেলন ২০১৫ সালে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন